নিউজ ডেস্ক, বাঁকুড়া: ডাক আসেনি। ডাকের সাজ মলিন হচ্ছে। তবে দুর্গা আসছে ঘরে। শরতের আকাশে পেঁজা তুলো মেঘ৷ বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। বাতাসে দোলা খাচ্ছে শ্বেতশুভ্র কাশ ফুল। পুজো পুজো গন্ধে মাতোয়ারা চারিদিক৷ মিলেমিশে সব কিছু জানান দিচ্ছে ‘মা আসছেন’।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও থিমভাবনা আর বিষয়-বৈচিত্রে বাংলার গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র মণ্ডপ সজ্জায় এসেছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে প্রতিমার পোশাক ও অলঙ্কার-সজ্জাতেও। কিন্তু ভালো নেই ওঁরা। ওঁরা মানে সেই সব ডাক শিল্পী, যাঁরা উৎসবের অন্যতম মূল কাণ্ডারি, যাঁদের হাত ধরেই মা আসেন এই মর্ত্যধামে।
বর্তমান সময়ে হারিয়ে যেতে বসেছে পুরাতনী ডাকের সাজ। মানুষের রুচি ও ইচ্ছার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে দেবদেবীর সাজসজ্জাও। এমনকি দাম বেড়েছে কাঁচা মালেরও। কিন্তু দাম বাড়ছে শিল্পীর অফূরান ধৈর্য্য আর পরিশ্রমের ফসল প্রতিমা অঙ্গ সজ্জার সামগ্রীর। ফলে এইই বাংলার শোলা শিল্প ও শিল্পী দু’জনই বিপন্ন।
বংশপরম্পরায় প্রতিমার ডাকের সাজ তৈরী করে আসছেন বাঁকুড়া শহরের ইদগমহল্লার রামু মালাকার। বাপ-ঠাকুর্দার হাত ধরে তিনি নিজেও এই শিল্পে হাত পাকিয়েছিলেন। তাঁর তৈরী প্রতিমার ডাক বাঁকুড়া শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরুলিয়া-চাইবাসা ছাড়াও এক সময় পাড়ি দিয়েছে আমেরিকার মতো দেশেও। কিন্তু তার পরেও জোটেনি সরকারীভাবে ‘শিল্পী’র তকমা।
সারা বছর কাজ করেও সংসার চলেনা। কারণ কাঁচামালের দাম প্রতিদিন হু-হু করে বাড়ছে। সেই তুলনায় কিছুই দাম মেলেনি উৎপাদিত দ্রব্যের। ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমেনি। কথা গুলো বলতে গিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল এই শিল্পীর গলায়।
হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী ডাকশিল্প কি ধ্বংসের মুখে? অনেকেই ইতিমধ্যে এই শিল্পের কাজ ছেড়ে বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকছেন ৷ নতুন প্রজন্মও সেভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন না ৷
চরম সংকটে শিল্পীরা। তার মধ্যেও রামু মালাকারের মতো কিছু শিল্পী শুধুমাত্র ‘নেশা’র টানে এখনো এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ৷ কিন্তু এভাবে আর কতো দিন? উত্তরটা জানা নেই রামু মালাকারদের।