তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে কোথায় জমায়েত করা যায়? বিপ্লবীরা যখন বেশ চিন্তায়, তখন মুশকিল আসান করলেন খোদ নেতাজি। তাঁর নির্দেশে অনুগামী বিপ্লবী অতীন বসু দুর্গাপুজোর (Durga Puja) আয়োজন করেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে আদায় হল চাঁদা। এভাবেই ১৯২৬ সালে কলকাতার সিমলা ব্যায়াম সমিতির (simla byam samiti) পুজো শুরু হয়। পুজোর ঐতিহ্য দিনদিন বেড়েছে। শুধু আড়ালে থেকে গিয়েছেন বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুই।
তখন ১৯২৬ সাল। ব্রিটিশ শাসনে পরাধীন ভারত। দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে সক্রিয় বিপ্লবীরা… বিভিন্ন গোপন আস্তানায় চলছে ব্রিটিশ বিরোধী কাজকর্ম.. ঠিক তখনই কলকাতাতেও বিপ্লবীদের জোটবদ্ধ করতে একটা কনভেনশনের দরকার ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের ফাঁকি দিয়ে জমায়েত কার্যত অসম্ভব। ফন্দি আঁটলেন স্বয়ং নেতাজি ।
সিমলা অঞ্চলের মহেন্দ্র গোস্বামী লেনে বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর বাড়ি। তাঁর বাড়িতে মাঝেমধ্যেই থাকতেন সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর নির্দেশেই এই বাড়িতে শুরু হয় কলকাতার প্রথম সর্বজনীন দুর্গোৎসব। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জমায়েতও সহজ হয়… সঙ্গে দেশমাতৃকার জন্য মাতৃ আরাধনার শুরু …
সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে যুবকদের স্বাস্থ্যচর্চায় জোর দিয়েছিলেন বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসু। নেতাজির নির্দেশে পুজো আয়োজনের দায়িত্বে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পুজোর খরচ উঠল বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা কেটে। তখন এই ভাবনা ছিল একদমই নতুন। হোগলাপাতার বেড়া দিয়ে তৈরি হল সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্যান্ডেল। এভাবেই অতীন বসুর হাত ধরে যাত্রা শুরু তিলোত্তমার প্রথম সর্বজনীনের।পুজোয় এসে সবার সঙ্গে পাত পেড়ে খেয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু। একবার বিপ্লবীদের জমায়েত টের পেয়ে পুজো বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। বেশিদিন নয়, দু’বছর পরই আবার চালু হয় পুজো।
একচালা দুর্গামূর্তি থেকে পাঁচটি চালচিত্রে ভাঙা দেবীমূর্তির প্রচলনও এখান থেকেই। দেবীমূর্তির চালচিত্র বদলে দেওয়ায় রক্ষণশীলদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুজো কমিটি। সমালোচনা থামাতে ১৯৩৯ সালে ফের নেতাজি পুজোর উদ্বোধন করেন। সব কর্মকাণ্ডের নেপথ্য কারিগর একজনই। অতীন বসু। জমিদারবাড়ি বারোয়ারি পেরিয়ে সর্বজনীন পুজোই এখন মেনস্ট্রিম। তবু আড়ালে থেকে গিয়েছেন, কলকাতার সর্বজনীন পুজো সংস্কৃতির প্রবর্তক বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসু।
কলকাতার সর্বপ্রথম বারোয়ারী দুর্গাপূজা ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট রোডের ভবানীপুর সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার পুজো, শুরু ১৯১০ সাল। তারপর ১৯১১ সালে শ্যামপুকুর আদি সার্বজনীন, ১৯১৩ সালে শিকদার বাগান, ১৯১৯ সালে নেবুবাগান, যা বর্তমানে বাগবাজার সার্বজনীন এবং ১৯২৬ সালে সিমলা ব্যায়াম সমিতি।