অট্টহাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেবী ফুল্লরার কাহিনী

দেবী ফুল্লরা নিয়ে কত কথা-ই না প্রচলিত। পীঠনির্ণরতন্ত্র অনুযায়ী ওখানে সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল— ‘অট্টহাসে চোষ্ঠপাতে দেবীসাফুল্লরাস্মৃতা’। সতীদেহের সেই একান্নটি অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে, সেই স্থানগুলিই…

devi phullara

দেবী ফুল্লরা নিয়ে কত কথা-ই না প্রচলিত। পীঠনির্ণরতন্ত্র অনুযায়ী ওখানে সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল— ‘অট্টহাসে চোষ্ঠপাতে দেবীসাফুল্লরাস্মৃতা’। সতীদেহের সেই একান্নটি অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে, সেই স্থানগুলিই মধ্যে রয়েছে ফুল্লরাও। তাই ফুল্লরাও সতীপীঠ নামে পরিচিত। শাস্ত্র কথা, লোককথা, কিংবদন্তি সব মিলিয়ে এই ফুল্লরার মাহাত্ম্যে কাল পরম্পরায় ভক্তবৃন্দ এখানে মাতৃদর্শনে সমাগত হয়। কথিত আছে যে, বশিষ্টের পুত্র অট্টহাসই ছিলেন এই সতীপীঠের প্রথম সাধক। তাঁর নামানুসারেই তৎকালীন লাভপুরের নাম ছিল অট্টহাস।‌

অন্যান্য সতীপীঠের মত এই স্থানকে ঘিরেও রয়েছে বহু গল্প ও কাহিনী। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় যে, প্রাচীন কালে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটে তপস্যা করার সময় মায়ের স্বপ্নাদেশ পান কৃষ্ণানন্দ গিরি নামে এক সন্ন্যাসী। স্বপ্নে ওই সন্ন্যাসীকে এই অঞ্চলে এসে তাঁর পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন মা। তবেই মোক্ষলাভ হবে ওই সন্ন্যাসীর। সেই সময় এই অঞ্চল ছিল এক দ্বীপের মত। নির্দেশ পেয়ে এই স্থানে আসেন সন্ন্যাসী কৃষ্ণানন্দ গিরি। এরপর কোনও এক মাঘী পূর্ণিমায় জয় দুর্গা রূপে মায়ের দেখা পান তিনি। তারপর তিনিই মায়ের কথা চারিদিকে প্রচার করতে শুরু করেন।” তথ্য সূত্র অনুযায়ী, “আগে মায়ের ২টি ছোট মন্দির ছিল। এটি হচ্ছে মায়ের তৃতীয় মন্দির। লাভপুরের জমিদার যাদবলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মায়ের পুজো করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। তারপর তিনিই ১৩০২ বঙ্গাব্দে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তখন মন্দির ছিল চুনসুড়কির। পরবর্তী কালে তা কংক্রিটে পরিণত করা হয়।

“প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয় ফুল্লরায়। মাঘী পূর্ণিমাতে বিরাট মেলা বসে। ১৫ দিন ধরে চলে উত্‍সব। শেষ হয় শিবরাত্রিতে।প্রতিদিন এখানে অন্নভোগের ব্যবস্থা আছে। দেবীকে রোজ মাছের টক নিবেদন করা হয়। সামান্য প্রণামীর বিনিময়ে যে কেউ প্রসাদ পেতে পারেন। আমিষ ও নিরামিষ, দুরকম ভোগই হয়।

মূল মন্দিরের সামনে রয়েছে সুবিশাল নাটমন্দির। হোম যজ্ঞ থেকে মাতৃ আরাধনার নানা পর্ব এখানে অনুষ্ঠিত হয়। নাটমন্দিরের অদূরে রয়েছে এই জলাশয়। নাম দেবীদহ।বীরভূমের প্রাচীন ফুল্লরাপীঠ এক সময় ছিল তান্ত্রিকদের আভিচারিক ক্রিয়াক্ষেত্র।

নির্জনতার কারণে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধকরা এসে, এখানে আসন পেতেছেন। তন্ত্র সাধনার উত্তম স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ ফুল্লরায় আগে নিয়মিত শিবাভোগের চল ছিল। আজও আউল বাউল পীর দরবেশের গানে মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন। সব মিলিয়ে মন্দির প্রাঙ্গনটি বৈচিত্র্যে ভরা এক পীঠভূমি। আর পীঠভূমিতে যাঁকে ঘিরে সব কিছু আবর্তিত, তিনি হলেন দেবী ফুল্লরা।