মাটি নয়, বরং সমুদ্রের শৈবাল দিয়ে বানানো হচ্ছে ইট

মাত্র মাস কয়েক আগেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল থাইল্যান্ডে অতিরিক্ত শৈবালের প্রভাবে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়া। এবার একই দৃশ্য নজরে আসছে উত্তর আমেরিকার…

মাত্র মাস কয়েক আগেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল থাইল্যান্ডে অতিরিক্ত শৈবালের প্রভাবে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়া। এবার একই দৃশ্য নজরে আসছে উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এলাকায়।

এই সামুদ্রিক শৈবাল একই সঙ্গে নষ্ট করছে সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য। অথচ মেক্সিকো ও ক্যারিবিয়ানের অর্থনীতির বড় অংশ নির্ভর করে তাদের পর্যটনের উপর। তাই সেসব সরাতে হোটেল মালিকেরা খরচা করছেন বিপুল অর্থ।

কিন্তু এই হাজার হাজার টন শৈবাল সরিয়ে তারা নিয়ে যাবেনও বা কোথায়। কারণ এসব শৈবাল যেখানেই রাখা হচ্ছে তার আশেপাশে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যেমনি সমস্যা রয়েছে তেমনিও রয়েছে এর সমাধান। এই শৈবাল থেকে এখন তৈরি হচ্ছে ইট।

মেক্সিকোর ক্যানসন বিচে সামুদ্রিক শৈবাল সরানোর দায়িত্বে থাকা ভাসকুইচ দারুণ এই পদ্ধতি বের করেছে। ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবসায়িক রূপ পেয়েছে। এটা এমন একটি তৈরীর প্রক্রিয়া যেখানে কাঁচামাল সংগ্রহের কোনও খরচ নেই। বরং ওই কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য উৎপাদনকারীদের দেওয়া হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

ছোটবেলায় উন্নত জীবনের উদ্দেশ্যে উমার বাসকুইচ গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর ৩০ বছর তাকে দেখতে হয়েছে দারিদ্র্যের নির্মম রূপ। অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি ২০১৩ সালে মেক্সিকোতে ফিরে আসেন। শুরু করেন গাছ কিনে গাছ বিক্রির ব্যবসা। যে একসময় পরিণত হয় বেশ বড় নার্সারিতে।

এই সময় তিনি দেখতে পান ক্যনশন বিচে জড়ো হচ্ছে কয়েকশো টন সামুদ্রিক শৈবাল। যার ফলে ওই উপকূলে পর্যটকের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছিল। বিপদে পড়ে ওই উপকূলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল ব্যবসায়ীরা।

সেই সুযোগে ভাসকুয়েচ ব্যবসায়ীদের শৈবাল পরিষ্কার করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ তিনি প্রত্যেকদিন পর্যটক আসার আগেই সকালবেলায় উপকূল থেকে সমস্ত শৈবাল সরিয়ে ফেলবেন। হোটেল মালিকেরা এই প্রস্তাবে রাজি হয় কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয়, তিনি এত শৈবাল রাখবেন কোথায়।

এখান থেকেই তিনি আবিষ্কার করেন এই শৈবাল থেকে ইট তৈরি করার দারুণ পদ্ধতি। প্রথমে এই শৈবাল গুলোকে মেশিনে গুঁড়ো করা হয়। এরপর এগুলোর সঙ্গে মেশানো হয় রাবিশের গুঁড়ো। অর্থাৎ ভাঙ্গা বিল্ডিং এর ইট, বালির গুঁড়ো। পরে এই মিশ্রণকে মেশিনে দিয়ে পেস্ট বানানো হয়। সেগুলো ছাঁচে ফেলে ইট তৈরি করা হয়।

বর্তমানে তার কাছে থাকা মেশিনে ৩০০০ ইট তৈরি করা হয়। ওই ব্যক্তি এখন পরিকল্পনা করছেন কিভাবে অটোমেটিক মেশিন তৈরি করা যায়। সেক্ষেত্রে তিনি প্রত্যেকদিন আট হাজার ইট তৈরি করতে পারবেন।

এই সমস্ত ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ি তৈরীর কাজে। তিনি তার ইটে বানানো বাড়ি বিক্রিও করেন আবার দানও করেন। তার প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত ৩৫টি বাড়ি তৈরি করেছেন। তার মধ্যে কুড়িটি বাড়ি বিক্রি হয়েছে এবং ১৫ টি বাড়ি দান করা হয়েছে হারিকেনে সব হারানো মানুষদের।