সিসিডির ভিড়ে শহরে এখনও বহাল তবিয়তে বর্তমান কলকাতার প্রথম কফি হাউসরা

বিশেষ প্রতিবেদন: কলকাতার প্রথম কফি হাউস রয়েছে মানুষের চোখের সামনেই। শুধু নজরে আসে না। এর অবস্থা কিন্তু ভাঙাচোরা নয়। যথেষ্ট সাবলীল কিন্তু ঐতিহ্যের কলেজ স্ট্রিটের…

coffee houses

বিশেষ প্রতিবেদন: কলকাতার প্রথম কফি হাউস রয়েছে মানুষের চোখের সামনেই। শুধু নজরে আসে না। এর অবস্থা কিন্তু ভাঙাচোরা নয়। যথেষ্ট সাবলীল কিন্তু ঐতিহ্যের কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের জনপ্রিয়তায় চাপা পড়ে রয়েছে কলকাতার প্রথম কফি হাউস। 

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

অষ্টাদশ শতকের কলকাতা। ইংরেজ ছেলে ছোকরাদের আড্ডা আড্ডা দেওয়ার জায়গা নেই। তারা তো বাঙালির মতো রোয়াকে কিংবা রাস্তার মোড়ে অথবা খেলার মাঠে পা বিছিয়ে আড্ডা মারতে অভ্যস্ত নয়। রিল্যাক্সেসনের জন্য একটা জায়গা চাই। কিন্তু কলকাতায় এসব নেই। কী করা যায়?

এসব দেখে শুনে উইলিয়াম পার্কেস নামের এক সাহেব কোম্পানির কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন একটা লম্বা আর্জি। তাঁর সোজাসাপ্টা আবেদন যে- তিনি নিজে পয়সা খরচ করে একটি বাগানবাড়ি কিনেছেন এবং সেটিকেই একটু অদল বদল করে খানা-পিনা, আমোদ আহ্লাদ আর আড্ডার কেন্দ্র তৈরি করতে চান। কারণ এই দূর প্রবাসে আড্ডার জায়গার বড়ই অভাব। এমন আর্জি শুনে কোম্পানির কর্তারাও খুশি। প্রস্তাবে শিলমোহর পড়ল।

কিছু কলকাতার ইংরেজ বিরোধিতা করলেন। তাঁদের বক্তব্যে ছিল এসব করে কিচ্ছু হবে না। এসব শুধু কবিতা লেখার ছল। কাজ টাজ করবে না ছোকরার দল। আড্ডার নামে লিখবে শুধুই কবিতা। তারপর তা লিখে পাঠিয়ে দেবে জাহাজের খালাসির হাতে। পৌঁছে যাবে ইংল্যান্ডে বসে থাকা তার প্রেয়সীর হাতে। এতে জেবারেশন নষ্ট ছাড়া কিছুই হবে না। কোম্পানির কাজকর্ম সব লাটে উঠবে।

কিন্তু অর্ডার তো হয়ে গিয়েছে। শহরে আইন পাশ হল, সকাল বেলার আপিস টাইমে ওসব আড্ডাখানা বন্ধ রাখতে হবে। আইনে লেখা হল ‘It was not to be open in the morning as the Board were afraid that it would be the means of keeping people from doing their duty.’ আইন মেনে পার্কেস হোটেল বানালেন। আর সেই হোটেলের নাম দিলেন ‘লন্ডন হোটেল’। পার্কেস তাঁর ‘লন্ডন’ নামধারী হোটেলে একটা ‘কফি রুম’ বানালেন বেশ যত্ন করে। আর সেই ‘কফি রুমে’ এক পেয়ালা কফি পানের খরচ মাত্র সিক্কা টাকা। এই টাকায় কফি পান আর কাগজ পড়া দুই-ই হয়ে যায়।

এতে মন ভরেনি ইংলিশ ছোকরাদের। রুম টুম নয় একটা কফি হাউস চাই তাদের। তখনই কলকাতায় তৈরি হল একটা ‘কাফি হাউস’। নাম দেওয়া হয় ‘ক্যালকাটা এক্সচেঞ্জ কাফি হাউস’। সেখানে কফি পানের সাথে সাথে কলকাতার ইংরেজি কাগজগুলি যেমন পড়া যেত তেমনই আবার মাদ্রাজের যাবতীয় ইংরেজি খবরের কাগজেও চোখ বুলানো যেত। এই কফি হাউসে নিয়মিত ভদ্রলোক, ব্যবসায়ী বণিকের আড্ডা বসতে লাগল সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গেই। তখনও কলেজ পড়ুয়াদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠেনি সেই কফি হাউস, কারণ কলকাতা তখনও ছাত্রসমাজ চোখেই দেখেনি। কিন্তু এখানে যারাই কফির কাপে তুফান তুলে আড্ডা দিতে আসেন তাঁরা চাঁদা দেন, মানে তাঁরা হলেন গিয়ে মেম্বার। প্রতি সন্ধ্যায় মেম্বারদের মধ্যে লেগে থাকত নানা বিষয়ের তর্ক-বিতর্ক। মাঝে মধ্যে সেই তর্ক এমন পর্যায়ে যেত যে লোকে ভাবত এবার বুঝি একটা ডুয়েল লড়াই লাগল। ‘সেপই সেপই’ বলে হাঁক পাড়তেন শান্তিকামী সদস্যরা।

coffee houses

টাকার অভাবে এই কফি হাউসটিও নিলামে উঠল। পড়ে রইল নিঝুম নামা বাড়িটি। আজকের যে ‘রয়্যাল এক্সচেঞ্জ’-এর বাড়িটি কলকাতায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেটিই ছিল ওই ‘ক্যালকাটা এক্সচেঞ্জ কাফি হাউস’।
শ্রীপান্থের লেখা থেকে আরও একটি কফি হাউসের খবর মেলে। তার নাম জেরুজালেম কফি হাউস। ওটি ছিল ভারতবর্ষ নিয়ে যাদের ব্যবসা, তাদেরই আড্ডাখানা।

১৭৯০ সাল। জন ম্যাকডোনাল্ড নামে এক নাচের মাস্টার কলকাতায় পা দিয়েই বুঝতে পারলেন, এখানে ‘জেরুজালেমের’ অভাব। তিনি স্থির করলেন ওই নামেই একখানা কফি হাউস খুলবেন কলকাতায়। ম্যাকডোনাল্ড বাড়ি কিনলেন একখানা ডালহৌসি স্কোয়ারে। কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট যেখানটায় মিলেছে ডালহৌসি স্কোয়ারে সেখানটায়। জেরুজালেম কফি হাউস খোলা হল।

ওখানেও কফি হাউস জমেনি । ওয়েলেসলি সাহেব ভাড়া নিলেন বাড়িটিকে। আর সেখানেই গড়ে উঠল একটি মহাবিদ্যালয়। সেটির নাম ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’। সেই বাড়িও এখনও বর্তমান এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক রূপে।