ফরাসি আক্রমণ থেকে বাঁচতে একটি দুর্গ তৈরি করা হয়েছিল সমুদ্রে। যেটি বর্তমান রূপ নিয়েছে বিলাসবহুল হোটেলে। নো ম্যানস ল্যান্ডফ্লোড (No Man’s Land Fort) নামে এই হোটেল ভাড়া করা হয় অনুষ্ঠানে। সাগরের মাঝে এমন হোটেলের সর্বত্র চমকে দেওয়া দৃশ্য আর ঘটনা ছড়িয়ে আছে।
ইংল্যান্ডের সোয়েন স্ট্রেটের মাঝখানে নির্মিত এই দুর্গ তৈরি হয়েছিল ভিক্টোরিয়া আমলে। যুদ্ধের কথা ভেবে তৈরি হয়েছিল এই বিশালাকার দুর্গ। কিন্তু যে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করবে বলে দুর্গ তৈরি হলো তারা আর আক্রমণ করেনি। সময়ের সাথে তৈরি বিশাল আকার দুর্গ এখন বিলাসবহুল হোটেল।
সেকালের দুর্গ আর একালের নো ম্যানস ল্যান্ডফ্লোড হোটেল কেমন? এর অন্দরমহলের সুযোগ সুবিধা থেকে টেক্কা দিতে পারে নামজাদা কোন হোটেলকে। কর্পোরেট অফিসের মত বড় হলঘর রয়েছে রয়েছে ২২ টি শোয়ার ঘর। এছাড়া রেস্তোরাঁ, পাব, নাইট ক্লাব, শপিং মল।
কেমন ছিল সেই দুর্গ?.প্রায় কুড়ি বছর ধরে তৈরি করা হয় নো ম্যানস ল্যান্ডফোড। ২০০ কোটি একর জুড়ে কামান সাজোয়া তৈরি হয়েছিল এই দুর্গ। খরচ পড়েছিল চার লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ পাউন্ড। ৪৯ টি কামান আর প্রচুর সেনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বৃত্তাকার ওই দুর্গের মাঝখানে ডুবে যাওয়া একটি অংশ ছিল, সেখান সমুদ্রতল থেকে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবোজাহাজের আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিরক্ষা স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হত এই দুর্গ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আক্রমণের প্রতিরোধ হিসেবে এটাকে কাজে লাগানো হয়।
৯০ দশকে বদলে যায় নো ম্যান ল্যান্ডসের রূপ। একসময়ের দুর্গ হয়ে যায় বিলাসবহুল হোটেল। হোটেলে রাখা হয় দুটি হেলিপ্যাড। আগে ছিল ২১ টি শোয়ার ঘর, রেস্তোরাঁ, গার্ডেন। গরম জলে গা ভেজানোর ব্যবস্থা হয়। রয়েছে রাজকীয় বন্দোবস্ত। ছুটি কাটানোর দারুণ সব উপকরণ থাকলেও নজর কাড়েনি। তাই সেভাবে চালু হয়নি হোটেলটি।
২০০৪ সাল নাগাদ এই দুর্গ কিনে নেয় হরমেশ পুনি নামে একজন ব্যক্তি। দাম পড়ে ৬০ লক্ষ পাউন্ড। তার উদ্দেশ্য ছিল ওই দুর্গ কে বিশেষ হোটেলে বিশেষ দিনে ভাড়া খাটানোর কিন্তু তাও আর হয়ে ওঠেনি। হোটেলের যে সুইমিংপলটি ছিল সেখান থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। দেখাশোনার অভাবে দুর্গের অবস্থা হয়ে যায় শুকনো গাছ, ধুলো বালিতে ভরে যাওয়া আসবাব, জল শুকিয়ে যাওয়া সুইমিং পুল। দুর্গ থেকে হরমেশ তুমিকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। বিশাল দামকষাকষির পরে এই হোটেল বিক্রি হয়ে যায় নয় লক্ষ দশ হাজার পাউন্ডে। ১৫০ বছর আগে যে মূল্য তৈরি হয়েছিল তার মাত্র দ্বিগুণ দামে। একটি সংস্থা হয়ে যায় ঐ দুর্গের মালিক। ওই সংস্থা কিভাবে এই দুর্গটি কাজে লাগাবে তা স্পষ্ট নয়। বেশ কিছু হেলিপ্যাড তৈরীর খবর মিলেছে। আপাতত এখানে বেড়াতে যাওয়া যায়। ২০১৫ সালে দুর্গের আধুনিকীকরণ হয়েছে।