Subhash Chakraborty: গানে গানে বিদায় ‘রাঙামাটির দ্যাশে যা’ গানের স্রষ্টাকে

এই বিখ্যাত গানটির জন্যই চির অমর হয়ে থাকবেন বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র, বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী ঝুমুরিয়া সুভাষ চক্রবর্তী (Subhash Chakraborty)।

Subhash Chakraborty

‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙা মাটির দেশে যা’, এই বিখ্যাত গানটি শোনেননি, এমন মানুষ এই বঙ্গদেশে নিতান্তই হাতেগোনা। এই সুর শুনলেই গুনগুনিয়ে ওঠেন সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালি। কিন্তু এই বিখ্যাত গানটির জন্যই চির অমর হয়ে থাকবেন বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র, বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী ঝুমুরিয়া সুভাষ চক্রবর্তী (Subhash Chakraborty)। একপ্রকার অন্তরালে থেকেই সারাজীবন ধরে সৃষ্টি করেছেন একের পর এক কালজয়ী গান। আজ, শনিবার তিনি ইহলোক ত্যাগ করলেন সেই অন্তরালে থেকেই। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

বাঁকুড়ার ভাদু, টুসু, ঝুমুরকে ভালবেসে এই সঙ্গীতের জগতের এই ক্ষেত্রটিকেই বেছে নিয়েছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। আর তাতেই এসেছিল আকাশছোঁয়া সাফল্য। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থেকে সুভাষ চক্রবর্তীর সুর ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা গ্রামবাংলায়। একসময় তাঁর ‘বাঁকুড়ার মাটিকে পেন্নাম করি দিনে দুপুরে…’ গানটি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। তেমনই তাঁর জীবনের শেষ গান সেই জন্মভূমি বাঁকুড়াকে নিয়েই। হাসপাতালে ভর্তির দিনকয়েক আগেই নিজের লেখা ও সুরে রেকর্ড করেন ‘বাঁকড়ি দেশের মানুষ আমি গাইবো ঝুমুর গান’।

১৯৫২ সালে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে জন্ম এই ঝুমুর শিল্পীর। ছোট থেকেই সঙ্গীতের পরিবেশেই বড় হয়ে ওঠা। সত্তরের দশকে লোকগানের দুনিয়ার উঠতি শিল্পী ছিলেন সুভাষ বাবু। সেইসময় অরুণ কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে আলাপ ঝুমুর গানের এক আড্ডায়। তাঁর লেখা ‘শ্রীরাম ইস্টিশনের মহুয়া গাছটা’ কবিতায় সুরারোপ করেন সুভাষবাবু, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা…’ নামে। এই বহুল প্রচলিত লোকগানের নেপথ্যের শিল্পীরা আজীবন থেকে গিয়েছেন প্রচারের আড়ালেই। লাল মাটির দেশ ছেড়ে কোনও দিনই কলকাতায় এসে সঙ্গীতের জগতে নিজের পরিচিত গড়ার চেষ্টা করেননি সুভাষ চক্রবর্তী, আক্ষেপের সুরে জানিয়েছিল তাঁর সুযোগ্যা কন্যা অর্পিতা চক্রবর্তী। প্রচারবিমুখ হওয়ার জেরেই ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’,‘মরক পরবে’-র মতো গানগুলো জনপ্রিয়তা পেলেও খানিক অন্তরালেই থেকে গিয়েছেন সুভাষবাবু।

লোকগান ছিল সুভাষ চক্রবর্তীর প্রাণ। তিনি বলতেন, ‘লোকসঙ্গীত শিকড়ের গান। শেকড়কে বাদ গিয়ে হাঁটা যায় না। একটা বৃক্ষ যেমন শেকড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, গোটা সংস্কৃতিটাই লোকসঙ্গীতের উপর দাঁড়িয়ে। ঝুমুর, ভাদু, টুুসু আমার রক্তে…’।

বাবার পদচিহ্ন অনুসরণ করে সুভাষ চক্রবর্তীর দুই সন্তানই লোকগানকেই বেছে নিয়েছেন। সুভাষ চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোকের ছায়া লোকগানের জগতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে লোকসঙ্গীতের একটি ঘরানা হারিয়ে গেল বলাই যায়..!