Puri Rath Yatra 2023: কেন ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার অসম্পূর্ণ মূর্তি পূজা করা হয়?

Puri Rath Yatra 2023: ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা শুরু হবে আষাঢ় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তারিখে অর্থাৎ আজ ২০ জুন ২০২৩ বিশ্ব বিখ্যাত ওড়িশার পুরীতে।

Puri Rath Yatra 2023: ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা শুরু হবে আষাঢ় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তারিখে অর্থাৎ আজ ২০ জুন ২০২৩ বিশ্ব বিখ্যাত ওড়িশার পুরীতে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথি থেকে এই যাত্রা শুরু হয় এবং আষাঢ় শুক্লের দশমী পর্যন্ত চলে। ভগবান জগন্নাথ এই রথযাত্রায় বসেন এবং ভাই বলভদ্র ও বোন সুভদ্রার সাথে ছিলেন। ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা পুরীর মন্দির ছেড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে যায়।

ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা তিনজনেই আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দশমী পর্যন্ত এই গুন্ডিচা মন্দিরে থাকেন। তারপর তারা তাদের পুরী মন্দিরে ফিরে আসে। এই রথ দেখতে এবং ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদ পেতে সারা দেশ ও বিশ্বের ভক্তরা প্রচুর সংখ্যায় পুরীতে আসেন। আসুন জেনে নেই ভগবান জগন্নাথ এবং এই রথযাত্রা সম্পর্কিত বিশেষ কিছু কথা।

প্রতি বছর কেন রথযাত্রা বের হয়?
প্রতি বছর আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় দিন থেকে দশম দিন পর্যন্ত ভগবান জগন্নাথ তাঁর ভাই বলভদ্র ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে যাত্রা করেন। আসলে, এই রথের পিছনে একটি পৌরাণিক বিশ্বাস রয়েছে, যা অনুসারে দ্বাপর যুগে ভগবান কৃষ্ণের বোন সুভদ্রা দ্বারকা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুভদ্রা ও বলভদ্রকে তার বোনের এই ইচ্ছা পূরণের জন্য রথে বসিয়ে দ্বারকায় যাত্রা করান। এভাবে প্রতি বছর জগন্নাথের সঙ্গে বলভদ্র ও সুভদ্রার রথযাত্রা বের হয়।

কেন ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার অসম্পূর্ণ মূর্তি পূজা করা হয়?
আজও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার অসম্পূর্ণ মূর্তি পূজিত হয়। ভগবানের এই অসমাপ্ত মূর্তিটির পিছনে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। আসলে পুরীতে এক রাজা রাজত্ব করতেন, যার নাম ছিল ইন্দ্রদ্যুম্ন। একদিন ভগবান জগন্নাথ স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে তাকে সাগরে ভাসমান কাঠের কথা বললেন এবং এই কাঠ দিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করার নির্দেশ দিলেন। তখন রাজা প্রভুর আদেশ পালন করে ছুতারকে সমুদ্র থেকে বয়ে আসা কাঠ সংগ্রহ করে একটি মূর্তি তৈরি করতে বললেন।

ছুতারের রূপে বিশ্বকর্মাজি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সামনে একটি শর্ত রাখেন যে তিনি দরজা বন্ধ করে মূর্তি তৈরি করবেন এবং মূর্তি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কেউ ভিতরে প্রবেশ করবে না। প্রথমে দরজা খুললে তারা প্রতিমা তৈরি করা বন্ধ করে দেবে। বন্ধ দরজার ভেতরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে কি না তা জানতে রাজা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিমা তৈরির শব্দ শুনতেন। একদিন রাজা ভিতর থেকে কোন শব্দ না পেয়ে ভাবলেন বিশ্বকর্মা কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। রাজা দরজা খুলে দিলেন এবং শর্তানুযায়ী সেখান থেকে বিশ্বকর্মা অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত এখানে একই রূপে বিরাজ করছে প্রতিমা।

এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রান্নাঘর
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের জন্য প্রসাদ তৈরি হয়। এখানে প্রতিদিন ১ লাখ মানুষকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। প্রতিদিন ভগবান জগন্নাথকে ৬ বার ভোগ নিবেদন করা হয় যাতে ৫৬ প্রকারের খাবার থাকে। পুরী জগন্নাথ মন্দিরে নির্মিত রান্নাঘরটিকে বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর বলে মনে করা হয়। এতে প্রায় ৫০০ বাবুর্চি এবং প্রায় ৩০০ সহকারী ঈশ্বরের নৈবেদ্য প্রস্তুত করেন। ভগবান জগন্নাথের প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা হয়। এই প্রসাদ রান্নার জন্য সাতটি মাটির হাঁড়ি একটির ওপরে আরেকটি স্থাপন করা হয় এবং প্রসাদ রান্নার প্রক্রিয়া শুরু হয় উপরের পাত্র থেকে। শুধু চুলায় মাটির হাঁড়িতে প্রসাদ রান্না করা হয়, সর্বনিম্ন পাত্রের প্রসাদ রান্না করা হয় শেষে। আশ্চর্যের বিষয় হল মন্দিরে প্রসাদ কখনও কম পড়ে না এবং মন্দিরের দরজা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে প্রসাদও শেষ হয়ে যায়।

পুরী জগন্নাথ মন্দিরের কিছু বিস্ময় সবাইকে চমকে দেয়…
1- মন্দিরের উপর কোন পাখি উড়ে না
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই মন্দিরের উপর দিয়ে কোনো পাখিকে উড়তে দেখা যায় না। এ ছাড়া এর ওপর দিয়ে কোনো বিমান যায় না।

2- মন্দিরের গম্বুজের ছায়া পড়ে না
ভগবান জগন্নাথের মন্দিরের উপরের অংশ অর্থাৎ গম্বুজটি বিজ্ঞানের এই নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করে, কারণ এর ছায়া দিনের কোনো সময় দেখা যায় না।

3- এখানে বিপরীত বায়ু প্রবাহিত হয়
সমুদ্র অঞ্চলে বাতাসের প্রবাহ দিনের বেলায় সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে থাকে, আর সন্ধ্যায় এর দিক পরিবর্তন হয়। বাতাস স্থল থেকে সমুদ্রে প্রবাহিত হতে শুরু করে, কিন্তু এখানে একটি অলৌকিক ঘটনা যে বাতাস দিনে দিনে স্থল থেকে সমুদ্রে এবং সন্ধ্যায় সমুদ্র থেকে স্থলে প্রবাহিত হয়।

4- মন্দিরের ভিতরে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায় না
সিংহ দ্বার থেকে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করলে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না, তবে মন্দির থেকে বের হলেই ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।