ED: লম্বা তালিকা ইডির, স্ক্যানারে বাম মুখ্যমন্ত্রী তবে মমতা?

আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ইডি দল তার দিল্লির বাড়ি থেকে একটি বিএমডাব্লু গাড়ি এবং…

আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ইডি দল তার দিল্লির বাড়ি থেকে একটি বিএমডাব্লু গাড়ি এবং নগদ ৩৫ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। যার উপর গোটা দেশের নজর রয়েছে। মোদী সরকার বিরোধীদের মুখবন্ধ করতে ইডিকে ব্যবহার করছে বলে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।প্রসঙ্গত, বিরোধী দলগুলির অনেক বর্তমান ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরও রয়েছেন ইডির আতশকাঁচের নিচে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, এর মাধ্যমে কিছু মানুষকে তারা উপকৃত করেছে। অভিযোগ, এই কাজ করে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। কেজরিওয়ালকে ইডি তলব করলেও এখনও পর্যন্ত তিনি হাজিরা দেননি।

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিও আর্থিক তছরুপের মামলায় ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন। বিধানসভার তৎকালীন টিডিপি নেতা রেবন্ত রেড্ডির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের এমএলসি নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য এক বিধায়ককে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০২১ সালের এপ্রিলে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে পিএমএলএ তদন্ত শুরু করে ইডি। ১৯৯৫ সালের এসএনসি লাভালিন মামলায় চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। মামলাটি ইদুক্কিতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আধুনিকীকরণের জন্য কানাডিয়ান সংস্থা এসএনসি লাভালিনকে দেওয়া চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত। তখন বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন বিজয়ন।

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি ইউপিএ জমানা থেকেই বহু তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ইডি ২০১৫ সালে একটি নতুন পিএমএলএ মামলায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। মামলাটি জগনের মালিকানাধীন ভারতী সিমেন্টের আর্থিক বিষয় সম্পর্কিত।

ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল তাঁর সরকারের আমলে কয়লা পরিবহণ, মদের দোকান চালানো এবং মহাদেব গেমিং অ্যাপে অনিয়ম সংক্রান্ত অন্তত তিনটি মামলায় ইডির তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন।

বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব, তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং ছেলে তেজস্বী যাদব আইআরসিটিসি কেলেঙ্কারি এবং চাকরির বিনিময়ে জমি কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত। ২০১৭ সালের আইআরসিটিসি মামলাটি দুটি আইআরসিটিসি হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লালুপ্রসাদ দ্বারা রেলমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করা একটি সংস্থাকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের সাথে সম্পর্কিত। ২০২২ সালের মামলাটি হল রেলে চাকরির বিনিময়ে জমি নেওয়ার জন্য লালু পরিবারের উপর জমি মামলা।

মানেসরের জমি চুক্তি এবং পঞ্চকুলায় অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডকে (এজেএল) জমি বরাদ্দ মামলায় হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি। এজেন্সি ইতিমধ্যে এজেএল মামলায় হুডা এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মতিলাল ভোরার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

‘রাজস্থান অ্যাম্বুলেন্স কেলেঙ্কারি’ মামলায় রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং তাঁর প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট এবং কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরমের নামও রয়েছে। ২০১৫ সালের মামলাটি ‘১০৮’ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালানোর জন্য ২০১০ সালে জিকিটজা হেলথকেয়ারকে জালিয়াতি করে চুক্তি দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত। পাইলট এবং কার্তি একসময় সংস্থায় পরিচালক ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত চালান জমা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বিরুদ্ধেও গোমতী নদীর তীরবর্তী প্রকল্প এবং খনির চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগে সিবিআই এবং ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন। বিএসপি প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর নাম কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার এফআইআর-এ নেই, তবে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বহু প্রকল্প ও প্রকল্প নিয়ে তদন্ত চলছে।

জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে (জেকেসিএ) বিসিসিআইয়ের দেওয়া অনুদানে অনিয়মের অভিযোগে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হচ্ছে। ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে তথা জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে সিবিআই। সিবিআইয়ের এফআইআরের ভিত্তিতে টুকির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের তদন্ত করছে ইডি। তৎকালীন মন্ত্রী টুকি ও তার ভাই ওই টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১৯ সালের নভেম্বরে মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংয়ের বাড়িতে দুর্নীতির অভিযোগে তল্লাশি চালায় সিবিআই। মামলাটি মণিপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিতে ৩৩২ কোটি টাকার তহবিল তছরুপের সাথে সম্পর্কিত। এ সময় ইবোবি এর সভাপতি ছিলেন। সিবিআইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পিএমএলএ মামলা দায়ের করে ইডি।

গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শঙ্করসিং বাঘেলা কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী থাকাকালীন মুম্বইয়ের একটি মূল্যবান জমি বিক্রি করে সরকারি কোষাগারের ৭০৯ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে সিবিআই এবং ইডির তদন্ত চলছে। ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। ইডি ২০১৬ সালের আগস্টে মামলাটি নথিভুক্ত করেছিল।