জীবনের আদর্শ হোক জগৎ জননী মা সারদা

বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবীকে তাদেরই পুকুরের পাড়ে থাকা বেলগাছ থেকে কেউ যেন নেমে এসে শিশুকন্যার রূপ ধরে গলা জড়িয়ে বলে ছিলেন, “আমি…

saroda-ma

বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবীকে তাদেরই পুকুরের পাড়ে থাকা বেলগাছ থেকে কেউ যেন নেমে এসে শিশুকন্যার রূপ ধরে গলা জড়িয়ে বলে ছিলেন, “আমি তোমার ঘরে এলাম মা”। এই রূপ দৃশ্য দেখা মাত্রই শ্যামাসুন্দরী ঞ্জান হারিয়ে ফেলেন। এর পর আসে সেই শুভক্ষণ । ১২৬০ সালের ৮ পৌষ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণাসপ্তমী তিথিতে জন্মনিলেন জগৎ জননী মা সারদা (Holy Mother)। প্রথমে তাঁর  নাম ছিল ক্ষেমঙ্করী‌। পরবর্তী কালে তাঁর মাসির অনুরোধ করায় তাঁর মা নাম রাখেন সারদা। পিতা শ্রী রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন দরিদ্র কিন্তু ভীষণ দয়ালু মানুষ।

মা সারদা (Holy Mother) তাঁর মামারবাড়ির এক ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব কে প্রথমবার দেখেই নিজের স্বামী বলে বিবেচনা করেন। রামকৃষ্ণদেবের মা চন্দ্রামণীদেবী যখন তাঁর এই ঈশ্বর পাগল ছেলেকে দক্ষিনেশ্বরের ভবতারিণী কালী মায়ের মন্দির থেকে নিয়ে এসে সংসারী করে তোলার জন্য পাত্রীর সন্ধান করছিলেন, তখনই রামকৃষ্ণ বলেছিলেন এদিক ওদিক খুঁজে কি হবে? জয়রামবাটির রামচন্দ্র মুখুজ্যের বাড়িতে গিয়ে দেখো, বিয়ের কনে সেখানেই রয়েছে। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের আর মা সারদা (Holy Mother)  দেবীর আগমনতো ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই হয়েছে। তাঁদের অমৃত কথা শুনে মানুষের মন পবিত্র হয়ে ওঠে।

   

বিপত্তারিণী পুজোয় কেন বাঁধা হয় লাল তাগা? কারণ জানলে অবাক হবেন!

মা সারদার (Holy Mother) যখন ছয় বছর বয়স ঠাকুরের তখন বাইশ বা তেইশ এই সময় তাঁদের বিবাহ হয়। শ্রীমার তেমন লেখাপড়া শেখা হয়ে ওঠেনি। ঠাকুরই তাঁকে মনে প্রাণে শিখিয়ে নিয়েছিলেন। মা সারদা (Holy Mother) উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের স্বামী পূর্ণানন্দ নামে এক সন্ন্যাসীর কাছে শক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

কিন্তু পরবর্তীকালে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে , ঠাকুর রামকৃষ্ণ নিজে শ্রীমার (Holy Mother)  জিহ্বায় বীজমন্ত্র লিখে দীক্ষাদান করেন। শ্রীমা সারদা (Holy Mother) ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের মতোই ত্যাগি যে কারণে ঠাকুর খুব ভালোবাসতেন তাকে। ১২৭৯ সালের জৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজার রাত্রে দক্ষিনেশ্বরে ষোড়শী পূজার মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণ মা সারদার (Holy Mother) সুপ্ত দেবীত্বকে জাগ্রত করেছিলেন। যাতে ভবিষ্যতে তিনি বিশ্বজননী হয়ে তার লোককল্যাণ ব্রত সম্পূর্ণ করতে পারেন।

ভক্তদের অনুরোধে শ্রীমা (Holy Mother) অনেক ভক্তকেই দীক্ষাদান করেছেন। কখনো আবার ভক্তদের খাওয়া হয়েগেলে মা নিজেই এঁটো পরিষ্কার করেছেন। আর বলতেন আমি যে মা গো, মা ছেলের করবে না তো কে করবে? তিনি কোনো জাত মানতেন না। সারাদিনের সমস্ত কাজের ফাঁকেই শ্রীমা জপ ও ধ্যান করতেন। শ্রীমা (Holy Mother) যথেষ্ট সমাজ সচেতন ছিলেন। স্বদেশী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীরা অধিকাংশই স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন।

মায়ের আগমনের আর মাত্র ১০০ দিন, জানুন এবারের দুর্গাপুজোর দিনক্ষণ

বিবেকানন্দের অবর্তমানে শ্রীমা নিজেই (Holy Mother)  তাঁদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলেন। এর পাশাপাশি শ্রীমা ১৮৯৮ সালের ১৩ ই নভেম্বর কোলকাতার বাগবাজারে নিবেদিতার স্কুলের উদ্বোধন করে মা বলেছিলেন ,আমি প্রার্থনা করছি, যেন এই বিদ্যালয়ের উপর জগন্মাতার আশীর্বাদ বর্ষিত হয় এবং এখান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত মেয়েরা যেন আদর্শ বালিকা হয়ে ওঠে। শ্রীমা বলতেন, আমি সতেরও মা অসতেরও মা।

ভাঙতে সবাই পাড়ে, গড়তে পারে কজন? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সবাই, কিন্তু ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে পারে কজন? দেহত্যাগের কয়েকদিন আগে মা বলেছিলেন যদি শান্তি চাও মা,কারও দোষ দেখোনা। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় মা জগৎ তোমার। অবশেষে শ্রীমা (Holy Mother) ১৯২০ সালের ২১ জুলাই এই মর্তলোক থেকে রামকৃষ্ণলোকে যাত্রা করেন। তাইতো মাকে আমরা সর্বদা স্মরণ করে মায়ের কাছে প্রার্থনা করি–
জননীং সারদাং দেবীং রামকৃষ্ণ্ং জগদগুরুম্।
পাদপদ্মে তয়ঃ শ্রিত্বা প্রণমামি মুহুর্মুহু:।

তথ্য সূত্র :- শ্রী শ্রী মায়ের কথা (অখণ্ড)
মাতৃদর্শন (স্বামী চেতনানন্দ)