এ সপ্তাহের গল্প: অভিমান

হাবুল মরে গিয়েছে গত শীতে। বীরেনও কিছুদিন আগেই এই শীতে। মুখটা ফ্যাকাশে ছিল বীরেনের। ঘন কুয়াশায় দেখা ভাঙাচোরা বাড়ির মতো। দাঁড়িয়ে থাকলে কুয়াশা ভেদ করে…

যুগল পণ্ডিত

হাবুল মরে গিয়েছে গত শীতে। বীরেনও কিছুদিন আগেই এই শীতে।
মুখটা ফ্যাকাশে ছিল বীরেনের। ঘন কুয়াশায় দেখা ভাঙাচোরা বাড়ির মতো।

দাঁড়িয়ে থাকলে কুয়াশা ভেদ করে দেখা যায় না কিছু। এগিয়ে যেতে যেতেই পরিষ্কার হয়।

পেছনেও ছুটে আসে কুয়াশা।
ইউক্যালিপ্টাস গাছ, কলেজ, সরকারি ভবন–
কাছের রিট্যায়ার্ডের মাঠটাও দূরে চলে গেছে দশ বছর।

ফিরে তাকালে যতই কাছের মনে হোক, অঙ্ক বলছে অন্য কথা। সামনের দিকে তো আর নেই অনন্ত সময়।

এবার শীত জাঁকিয়ে পড়বে, সন্দেহ নেই। বিষকামড় দিতে চায় এখনই। সবে নভেম্বর।

মনে হয় সামনেই স্কুল ফাইনালের পরীক্ষা।

শীতের বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্রোহাত্মক দৃঢ়তায় হাঁটছেন এক সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ।

ছেলে উলের সোয়েটার এনে দিয়েছে। ভেতরে উলিকট। গলায় মাফলার। মাথায় মাঙ্কি টুপি। সেও প্রচণ্ড গরম।
কান সহ্য করতে পারে না একটু হাঁটলেই।

বৃদ্ধ হাঁটার অভ্যাসটি রেখেছেন নিয়মিত। জুতো জোড়াও বেশ নরম।

সারা শহর জুড়ে পথবাতি গুলো জ্বলছে। গাড়িগুলোও ছুটোছুটি করছে। মানুষ গুলো যেন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসছে। কারও হাতের থলেতে ফলমূল। কোনও একটি মেয়ের উচ্চকিত হাসি। কোনও একটি লোক কাঁধ কুঁজো করে সাইকেলের প্যাডেল ঘোরাচ্ছে। দ্রুত চলে যাচ্ছে বাইক পাশ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের মতো।
দরকষাকষি হচ্ছে ফুটপাতে।

সত্তোরোর্ধ এই বৃদ্ধ একা হাঁটছেন কেন কেউ জানে না।
কোনও কাজ নেই শহরে। নেই কোনও কেনাকাটারও দায়ভার। তবুও।

পথে কেউ কথা বলছে না।
কেউ নজরই দিচ্ছে না তাঁর দিকে।
তবে, হ্যাঁ,
হাবুল, বীরেনরা হয়তো দেখে থাকবে,
–কথা না শুনলে কেমন হয়?

–দ্যাখো শুধু হাঁটুর ব্যথার অজুহাত দিয়ে, ঘরে বসে, বৌকে দিয়ে চা করিয়ে খাওয়া?

শীতকে জব্দ করতেই হবে।
ভয় পেলে চলবে না।