প্রসেনজিৎ চৌধুরী: কুয়াশা ঘেরা জীবন। কুয়াশা মানেই ধন্ধ। আবছায়া। বোঝা না বোঝার মাঝে কিছু অবয়ব। এইরকমই এক রোমহর্ষক চরিত্র বাংলাদেশের পাঠককুলের কাছে মাসুদ রানা। তবে পশ্চিমবঙ্গে অচেনা। প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি রোমাঞ্চ কাহিনী ‘মাসুদ রানা’ লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন। (Qazi Anwar Hussain) তাঁর চরিত্র বাংলা রোমাঞ্চ সাহিত্যের জেমস বন্ড- মাসুদ রানাকে ঘিরে একরাশ ‘কুয়াশা’ ছড়িয়ে থাকবে আরও অন্তত কয়েক দশক।
আশ্চর্যের বিষয়, বাংলাদেশ সীমান্তের ধার ঘেঁষে থাকা পশ্চিমবঙ্গের কোনও এলাকায় মাসুদ রানার পরিচিতি নেই। তবে কি নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ এই দুরন্ত চরিত্রটি? এই প্রশ্নের উত্তর আমি বিস্তর খুঁজেছি, তাতে বিস্ময় লেগেছে আরও। এদিক বাংলার কোনও রোমাঞ্চ নায়কের সঙ্গে মাসুদ রানার কাজকর্মে মিলই নেই। মাসুদ রানা দৌড়চ্ছে মধ্য এশিয়ার মাটিতে। চূড়ান্ত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বৈঠকের পর ষড়যন্ত্রকে বানচাল করতেই তার অভিযান।
বাঙালি এই অতিমানবিক চরিত্র বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই মেলেনি। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের। তিনি ঢাকা থেকেই রোমাঞ্চ জগতের রাজা হয়েছেন।
লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রয়াণ হলো ৮৫ বছর বয়সে। তিনি অসুস্থ ছিলেন। ১৯৩৬ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম নবাব। কখনও বিদ্যুৎ মিত্র বা শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন। কুয়াশা সিরিজের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে বিচরণ ঘটে। দৌড় শুরু করে এজেন্ট মাসুদ রানা।
কে এই মাসুদ রানা ?
বাংলাদেশের যে কোনও কিশোর-কিশোরীবেলার পাঠক তো বটেই, যুব প্রজন্ম বুঁদ হয়েছে ভয়াবহ সব অভিযান ভিত্তিক বইগুলি পড়ে। প্রয়াত সাহিত্যিকের অমর সৃষ্টি মাসুদ রানা নামে মিশে আছেন কিংবদন্তি রাজপুত বীর মহারানা প্রতাপ আর বাংলাদেশের গীতিকার মাসুদ করিম। দুই পছন্দের ব্যক্তিত্বের নাম নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন সৃষ্টি করেছিলেন এজেন্ট মাসুদ রানা। ঠিক অনেকটা জেমস বন্ডকে নকল করে।
পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ টানা পাঁচ দশক মাসুদ রানা সিরিজে মেতে রয়েছে বাংলাদেশ। এখন নেট দুনিয়ার কল্যাণে নামটি পশ্চিমবঙ্গে একটু আলোচিত। তবে তাকে পাঠক মহলে ধরা ছোঁয়া যায়নি পশ্চিমবঙ্গে।
মাসুদ রানাকে নিয়ে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। বিতর্ক ছাপিয়ে জনপ্রিয়তার সূচকও বরাবর উর্ধমুখী হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মধ্য এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত মাসুদ রানার অভিযান শেষ হয়েছে। সেই সংকেত চলে গেছে তার ইন্টেলিজেন্স বিভাগে।