শিশুদের ওজন বাড়ানোর ১০টি স্বাস্থ্যকর খাবার

শিশুদের সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশের (Healthy weight gain) জন্য সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের ওজন কম থাকার সমস্যায় চিন্তিত থাকেন। তবে, শিশুদের…

weight gain foods for kids indian

শিশুদের সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশের (Healthy weight gain) জন্য সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের ওজন কম থাকার সমস্যায় চিন্তিত থাকেন। তবে, শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন চিনিযুক্ত মিষ্টি বা ফাস্ট ফুডের উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পরিবর্তে, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শিশুদের ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। আজ আমরা আলোচনা করব বাচ্চাদের জন্য ১০টি সেরা খাবারের তালিকা, যা তাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে এবং সেই সঙ্গে সুস্থ রাখবে।

শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা
শিশুদের খাদ্যতালিকা তৈরি করার সময় বাবা-মাকে তাদের পুষ্টির চাহিদার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একটি সুষম খাদ্য শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালোরি সরবরাহ করবে এবং তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেবে। নিচে উল্লেখিত খাবারগুলি শিশুদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।

   

১. কলা: কলা পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এবং কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। এটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত ফল, যা শিশুদের ওজন বাড়াতে সহায়ক। কলা ম্যাশ করে বা স্মুদি হিসেবে পরিবেশন করা যায়। এটি ভ্রমণের সময়ও একটি সুবিধাজনক জলখাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

Advertisements

২. মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে ম্যাশ করা সহজ এবং এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, তামা, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এছাড়া এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। মিষ্টি আলু দিয়ে স্যুপ বা পিউরি তৈরি করে শিশুদের খাওয়ানো যায়।

৩. ডাল: ডাল প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার এবং পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ। ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুদের জন্য ডালের স্যুপ বা ডালের জল একটি জনপ্রিয় ওজন বাড়ানোর খাবার। এটি সহজে হজম হয় এবং শিশুর শরীরে পুষ্টি যোগায়।

৪. রাগী: রাগীতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং প্রোটিন রয়েছে। এটি শিশুদের জন্য ইডলি, দোসা, পোরিজ বা কেকের আকারে পরিবেশন করা যায়। রাগী সহজে হজমযোগ্য এবং ওজন বাড়াতে কার্যকর।

৫. ঘি: ঘি একটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। শিশুর ৮ মাস বয়স থেকে এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করা যায়। ডাল, খিচড়ি বা সবজির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ঘি মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ঘরে তৈরি ঘি ব্যবহার করলে ভেজালের চিন্তা থাকে না এবং এটি শিশুর স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৬. দুগ্ধজাত পণ্য: এক বছর বয়সের পর শিশুর খাদ্যে দই বা অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য যোগ করা যায়। দইতে থাকা চর্বি ও পুষ্টিকর ক্যালোরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পেটের সমস্যা দূর করে।

৭. ডিম: ডিম প্রোটিন, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর। শিশুর বয়স এক বছর হলে ডিম পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। ওমলেট, সেদ্ধ ডিম, ফ্রেঞ্চ টোস্ট বা ডিম-ভাতের মতো সুস্বাদু খাবার তৈরি করে শিশুকে খাওয়ানো যায়।

৮. শুকনো ফল ও বীজ: বাদাম, পেস্তা, আখরোট, কাজু, কিসমিস এবং তিল, কুমড়োর বীজের মতো শুকনো ফল ও বীজ শিশুদের জন্য পুষ্টিকর। এগুলো গুঁড়ো করে দুধে মিশিয়ে বা সরাসরি জলখাবার হিসেবে দেওয়া যায়। এটি ওজন বাড়াতে এবং শক্তি সরবরাহে কার্যকর।

৯. অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডো ভিটামিন বি৬, ই, সি, কে, ফোলেট এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা শিশুদের ওজন বাড়াতে সহায়ক। এটি ডিপ বা স্প্রেড হিসেবে পরিবেশন করা যায়, যা শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়।

১০. চিকেন: চিকেন প্রোটিনের একটি সহজলভ্য ও হজমযোগ্য উৎস। এটি শিশুর পেশি গঠন এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চিকেন তরকারি, কাবাব বা সালাদ হিসেবে পরিবেশন করা যায়।

কেন স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেবেন?
অনেক বাবা-মা শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য চিনিযুক্ত খাবারের উপর নির্ভর করেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। এটি শিশুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি, দাঁতের সমস্যা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উপরে উল্লেখিত খাবারগুলি শুধু ওজন বাড়ায় না, বরং শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করে। এগুলোতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে, যা শিশুর শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কীভাবে এই খাবারগুলো শিশুর খাদ্যে যোগ করবেন?
শিশুদের খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো ধীরে ধীরে যোগ করা উচিত। শিশুর বয়স ও হজম ক্ষমতা বিবেচনা করে খাবার তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ, ছোট শিশুদের জন্য ম্যাশ করা কলা বা ডালের স্যুপ দেওয়া যায়। বড় শিশুদের জন্য ডিম, চিকেন বা শুকনো ফল দিয়ে সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা যায়। খাবারকে আকর্ষণীয় করে পরিবেশন করলে শিশুরা আগ্রহের সঙ্গে খাবে।

শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া তাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিনিয়োগ। কলা, মিষ্টি আলু, ডাল, রাগী, ঘি, দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, শুকনো ফল, অ্যাভোকাডো এবং চিকেনের মতো খাবার শিশুর শরীরে পুষ্টি ও ক্যালোরি সরবরাহ করে। বাবা-মায়ের উচিত শিশুর খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো যোগ করে তাদের সুস্থ ও সবল করে তোলা। সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে শিশুরা শুধু ওজনই বাড়াবে না, বরং একটি সুস্থ জীবনের ভিত্তিও পাবে।