বাবরি মসজিদ ধংসের সময় বিতর্কিত মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের প্রয়াণ

লখনউ: যে রাম মন্দিরের স্বপ্ন দেখতেন তার ভূমি পূজা হয়েছে। কিন্তু মন্দির দেখা আর হলো না। ৮৯ বছরে প্রয়াত হলেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ…

ex cm of Uttar pradesh kalyan singh

লখনউ: যে রাম মন্দিরের স্বপ্ন দেখতেন তার ভূমি পূজা হয়েছে। কিন্তু মন্দির দেখা আর হলো না। ৮৯ বছরে প্রয়াত হলেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং। কট্টর সংঘ পরিবার সদস্য এই হিন্দুত্ববাদী নেতা যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধংস করেছিল করসেবকরা।

১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধংস স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁক বলে চিহ্নিত। তবে সংঘ পরিবার এই মুহূর্তকে বারবার দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

চরম রাজনৈতিক ঝড় তৈরি হয়েছিল ১৯৯০ দশকে। সংঘ পরিবার ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বনাম কংগ্রেস ও বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলির সংঘাতের কেন্দ্র ছিল উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বিতর্কিত রামজন্ম ভূমি ও সংলগ্ন বাবরি মসজিদ চত্বর। এই বিতর্কিত জমির অধিকার দাবি করে আরএসএস ও সহযোগী দলগুলির করসেবকরা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যে গণঅবস্থান নিয়েছিল তার পরিণতি বাবরি ধংস। ততকালীন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের সরকার কেন নীরব ছিল সে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনই কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের নরম অবস্থান নিয়েও বিস্তর সমালোচনা হয়।

প্রায় পুরো রাজনৈতিক জীবনটাই হিন্দুত্ব জাগরণ রাজনীতি ছিল কল্যাণ সিংয়ের। তিনি আরএসএসের নেতা। পরে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ধংসের ঘটনায় তাঁর প্রশাসনের গাফিলতি নাকি সমর্থন এই নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা করেছে লিবারহান কমিশন। রিপোর্টে কল্যাণ সিংকে অন্যতম অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বাবরি ধংস বিজেপির উল্কা গতিতে উত্থান সবমিলে কল্যাণ সিং বাজপেয়ী ও আদবানী পরবর্তী সবথেকে আলোচিত বিতর্কিত বিজেপি নেতা ছিলেন। কল্যাণ সিংহ প্রথমবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন ১৯৯১ সালে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর তিনি প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৯৯ সালে তাঁকে সরিয়ে দেয় বিজেপি। বিজেপি ছেড়ে দেন। আলাদা দল গঠন করেন। ২০০৪ সালে তিনি ফের বিজেপিতে ফিরে আসেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক বিতর্কিত জীবন তাঁর। ১৯৩২ সালে আলিগড় জেলায় জন্ম হয় তাঁর। গত মাস দেড়েক ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কল্যাণ সিং। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ বিজেপি।  প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অন্যান্য দলের নেতৃত্বরা।