কামদুনি গণধর্ষণকাণ্ডে ফাঁসির পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড। রায়ের পর কামদুনিবিক্ষোভের প্রতিবাদী মুখ টুম্পা কয়াল কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম দোষীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। রাজ্যের মানুষরা দেখেছিলেন আমরা নিরপেক্ষভাবে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ভরসা করেছিলাম আমাদের সরকারের উপর। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দোষীরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক সাজা পায় সেই ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাইকোর্ট থেকে আমরা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, আমরা বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর উপর আস্থা রেখেছিলাম। রাজ্যের মানুষকে সুবিচার দেবেন। কিন্তু আমরা হতাশ।আজকে কামদুনিতে হয়েছে পরে আর কোথাও হবে না তার কোনো মানে নেই। এদিন টুম্পা কয়াল আরও জানান, এর শেষ দেখে ছাড়বো। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলেও জানান তিনি।
টুম্পা বলছেন, “ভয় আমি আর পাচ্ছি না। আমি বুঝে গিয়েছি যে এই রাজ্যে বাস করতে গেলে লড়াই করেই বাঁচতে হবে। রাজ্যে একের পর এক মায়ের কোল খালি হচ্ছে। একের পর এক ধর্ষণ হচ্ছে।”
কাম্দুনিকাণ্ডে মৃত ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে যাবেন। তাদের আর কারোর প্রতি আস্থা নেই। সরকরের সদিচ্ছার অভাবে এই রায় বলে জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কোনো সদুত্তর পান নি বলেও জানান তিনি। রাজ্য সরকারের উকিল টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন আর এক প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল।তিনি বলেন,আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব। নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেব।
২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের মতো তার ঢেউ পৌঁছয় দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামদুনি সফরের সময় তাঁর সামনে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এর পরে ঘটনার তদন্তের ভার পায় সিআইডি। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয় নজনের বিরুদ্ধে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতার নগর দায়রা আদালতের (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) বিচারক সঞ্চিতা সরকার দোষী ছজনের শাস্তি ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। বাকি তিন অপরাধী শেখ ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করের হয় আমৃত্যু জেলের সাজা। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।