কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের ১২৫ মিটার পথ তৈরির কাজ শেষ

কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) অরেঞ্জ লাইনের (Orange Line) অগ্রগতি এখন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। দীর্ঘ প্রায় ছ’বছর অপেক্ষার পর, মেট্রোর এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে ১২৫ মিটার…

Next year, the East-West Metro will run throughout the entire route. When will it be inaugurated?

কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) অরেঞ্জ লাইনের (Orange Line) অগ্রগতি এখন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। দীর্ঘ প্রায় ছ’বছর অপেক্ষার পর, মেট্রোর এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে ১২৫ মিটার (125-meter) দীর্ঘ একটি ব্যবধান পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর রুটের মেট্রোপলিটন মোড়ের কাছে মেট্রোর ট্র্যাকের দুটি ভায়াডাক্টের মধ্যে এই ব্যবধানটি ছিল। গার্ডার লঞ্চারের মাধ্যমে এই ব্যবধান পূর্ণ হওয়ায় প্রকল্পটি এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারবে।

গার্ডার লঞ্চারের মাধ্যমে ১২৫ মিটার ব্যবধান পূর্ণ:
মেট্রোপলিটন ক্রসিংয়ের দু’প্রান্তে মেট্রোর দুটি ভায়াডাক্টের মধ্যে ১২৫ মিটার ব্যবধান ছিল, যা একেবারে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মেট্রো রেল চলাচলের জন্য। এই ব্যবধানটি পূর্ণ করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি এবং যন্ত্রের ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম গার্ডার লঞ্চার। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে গার্ডারগুলিকে যথাস্থানে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়। এই গার্ডারগুলি মেট্রোর ভায়াডাক্ট তৈরির অন্যতম উপাদান এবং এর উপরে মেট্রোর ট্র্যাক বসানো হয়।

   

গার্ডার লঞ্চারের মাধ্যমে এই ১২৫ মিটার ব্যবধানটি পূর্ণ করার কাজটি শেষ হওয়ার পর, মেট্রোর এই রুটের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। এটি কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং এর মাধ্যমে গোটা প্রকল্পের গতিতে একটি বড়ো পরিবর্তন আসবে।

জমি সংক্রান্ত সমস্যা এবং বাধা কাটানো:
কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের নির্মাণ কাজে বেশ কিছু বাধা ছিল, যার মধ্যে অন্যতম জমি সংক্রান্ত সমস্যা। প্রকল্পের শুরুতে জমির অভাব এবং উপযুক্ত জায়গার অনুপস্থিতি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইএম বাইপাসের দু’পাশে রাস্তা সম্প্রসারণ হলেও, গার্ডার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নির্মাণকারী সংস্থার হাতে ছিল না। এই সমস্যা দীর্ঘদিন প্রকল্পের অগ্রগতি থামিয়ে রেখেছিল।

তবে, পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্মাণকারী সংস্থার একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। বাইপাসের উপর নির্দিষ্ট জায়গায় রাস্তা বন্ধ রেখে গার্ডার তৈরির কাজ শুরু করা হয়। এর ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি অবশেষে সম্ভব হয় এবং মেট্রোর এই অংশে নির্মাণ কাজের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

নিরবচ্ছিন্ন ভায়াডাক্ট নির্মাণের পথ উন্মুক্ত:
এখন, এই ১২৫ মিটার ব্যবধান পূর্ণ হওয়ার ফলে, সায়েন্স সিটি থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত ভায়াডাক্ট নির্মাণের কাজ আরও দ্রুততর হতে পারবে। আরভিএনএল জানাচ্ছে, নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত ৫.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে গেছে। রুবি থেকে মেট্রোপলিটন পর্যন্ত ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে ইতিমধ্যেই যাত্রী পরিবহণের অনুমোদন পেয়েছে। এখন মেট্রোপলিটন থেকে সেক্টর-ফাইভ পর্যন্ত ৩.৫ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হবে।

এখন পর্যন্ত, অরেঞ্জ লাইনের এই অংশে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে এবং অবশেষে মেট্রো চালানোর জন্য বাকি অংশটিও তৈরি হয়ে যাবে। বিশেষত, মেট্রোপলিটন থেকে সেক্টর-ফাইভ পর্যন্ত রুটের কাজ শেষ হলে, কলকাতার মানুষের যাতায়াতে আরও সুবিধা হবে।

মেট্রোর ভবিষ্যত এবং কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি:
কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের এই পদক্ষেপ শুধু মেট্রোর উন্নতির জন্য নয়, বরং কলকাতা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য একটি বড়ো পরিবর্তন আনবে। বর্তমানে, শহরে যানজট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মেট্রো এই সমস্যার সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে। মেট্রোর মাধ্যমে মানুষ দ্রুত এবং নিরাপদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছাতে পারবেন। এর ফলে, সড়কপথে যানজট কমবে এবং পরিবহণ ব্যবস্থা আরও সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য হবে।

বর্তমানে কলকাতায় মেট্রোর একাধিক রুটের নির্মাণ কাজ চলছে এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন রুট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি কলকাতা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং উন্নত করে তুলবে। মেট্রো রেল চলাচলের পরিসর বৃদ্ধির ফলে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা আরও দ্রুত এবং দক্ষ হয়ে উঠবে, যা কলকাতার বাসিন্দাদের জন্য এক বড়ো সুবিধা হবে।

পরিষ্কার পরিবহণ ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ:
মেট্রো রেল শুধু দ্রুত যাতায়াতের জন্য নয়, বরং পরিবেশবান্ধব একটি পরিবহণ ব্যবস্থা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেট্রো রেল পরিবহণ ব্যবস্থা শহরের বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করে এবং এটি পরিবেশের উপর চাপ কমানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করে। এই পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে একদিকে যেমন যানজট কমবে, তেমনি পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে।

কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের ১২৫ মিটার ব্যবধান পূর্ণ করার কাজ শেষ হওয়ার পর, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। মেট্রো রেলের মাধ্যমে কলকাতা শহরের যাতায়াত আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ হবে। মেট্রো প্রকল্পের এই অগ্রগতি কলকাতার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং ভবিষ্যতে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।