পশ্চিমবঙ্গ গৃহ সহায়িকা ইউনিয়ন “চাই সম্মান, চাই ন্যায্য মজুরি” এর দাবীতে লেবার কমিশনার ও শ্রমমন্ত্রীকে ডেপুটেশন জমা দিল দুপুর দুটোর সময়।
তাঁরা বলছেন, কাজের দিদি, পরিচালিকা, রান্নার দিদি, বাচ্চার আয়া, ২৪ ঘন্টার কাজের লোক কারুর বা বাড়িতে ফুরনে কাজের লোক এইগুলিই আমাদের পরিচিতি। লোকের বাড়িতে এঁটো বাসন মাজা, ঘর মোছা, জামা কাপড় কাচা, জল তোলা, রান্না করা, বাচ্চার দেখভাল করা এসবই আমাদের কাজ।
আলাদা আলাদা কাজের আলাদা আলাদা বেতন। কিন্তু এই বেতন কাঠামো কে ঠিক করে? অঞ্চল ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজের একটা নির্দিষ্ট রেট আছে, এটা ঠিক। কিন্তু তার কোনো নির্দেশিকা নেই। নেই সম্মান। কাজের বাড়িতে বাথরুম ব্যবহার করার উপায় নেই। আবাসন হলে তো নিচের গ্যারেজের বাথরুম বরাদ্দ। বেশির ভাগ বাড়িতে খেতে দেওয়ার চল উঠে গেছে। আর খেতে দিলেও আলাদা বাসন, টেবিলে নয় মেঝেতে বসে খাওয়া।
নিরুপায় হয়েই এই কাজ করতে হয়। তাও আবার কাজের গ্যারান্টি নেই। যখন তখন বিনা নোটিশে কাজ চলেও যায়। লকডাউনের সময়: অনেকের কাজ চলে গেছে। আগে ৪ টে বাড়িতে কাজ করলে এখন ২টি বাড়িতে কাজ আছে। বাস, অটো, ট্রেনের ভাড়া বেড়েছে অনেকটা। সাথে আয় কমেছে। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, আটা, তেল, শাক-সবজি সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। সারাদিন খেটেও সংসার চালানো দায়। কি করা উচিৎ, ভেবে কুল পাওয়া দুষ্কর। দিল্লির মোদী সরকার অনেক কথা বলেছিল। কিন্তু মাসে ১০ কেজি করে যে চাল / গম দিতো সেটাও বন্ধ করে দিলো।
সুপ্রিম কোর্ট বলে দিল সারাদেশে অসংগঠিত শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করতে। ই-শ্রম পোর্টালে নাম তোলা হলো। কিন্তু, তারপরেও কিছুই করছে না তাদের জন্য।
পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, কেরোসিনের দাম বাড়াচ্ছে প্রতিদিন। রাজ্যের সরকার অনেক কথা বলছে কিন্তু সমস্যার সমাধানে কার্যকরী কোনো ভূমিকাই পালন করছে না।
এটা পরিষ্কার, আমাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা সোজা নয়। ধারাবাহিক আন্দোলন করেই নিজেদের অধিকার অর্জন করতে হবে।
তাই আগামী আমরা লেবার কমিশনার ও শ্রমমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দেবো। লড়াই লড়বো। নিজেদের দাবী আদায় করব।
দাবী-
১। ভারত সরকারকে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশনের ১৮৯ নং সুপারিশ (গৃহসহায়িকা সংক্রান্ত) কার্যকর করতে হবে।
২। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে গৃহসহায়িকাদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো ঘোষণা করতে হবে। আমাদের দাবি, ঘণ্টা পিছু ৭৫ টাকা। উৎসব ভাতা দিতে হবে এবং ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি করতে হবে।
৩। সকল গৃহসহায়িকাদের পরিচয় পত্র দিতে হবে, এবং সামাজিক সুরক্ষা আইন ২০০৮ এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পেনশান, পি এফ, চিকিৎসা, সন্তানের পড়াশোনা সমস্ত সুবিধা দিতে হবে হবে।
৪। গৃহসহায়িকাদের সপ্তাহে একদিন ছুটি, অসুস্থতার ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, এছাড়াও বছরে বিশেষ ছুটির জন্য সরকারি সার্কুলার জারি করতে হবে।
৫। গৃহসহায়িকাদের জন্য সরকারকে স্পেশাল সামাজিক সুরক্ষা আইন কার্যকর করতে হবে। ৫৫ বছর বয়স হয়ে গেলে ন্যূনতম ৩০০০ টাকা
পেনশান চালু করতে হবে।
৬। শ্রমিক বিরোধী ৪টি শ্রমকোড বাতিল করতে হবে।
৭। কাজের বাড়িতে খাবারদাবার, বাথরুম ব্যবহার বা বাসনপত্রের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবেনা। লিঙ্গ ভিত্তিক, ধর্ম ভিত্তিক বা সামাজিক বৈষম্য কোনভাবেই যাতে প্রকাশ না পায় তাতে নজর দিতে হবে।