রূপনারায়ণের নাম ভাঙিয়ে বাজারে ভুয়ো ইলিশ, প্রতারিত ক্রেতারা

ইলিশ প্রেমীদের কাছে ‘রূপনারায়ণের ইলিশ’ এক আবেগের নাম। তার স্বাদ, তার গন্ধ, আর তার খ্যাতি বাঙালির রসনায় এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে…

Big size hilsa caught in the nets in uluberia

ইলিশ প্রেমীদের কাছে ‘রূপনারায়ণের ইলিশ’ এক আবেগের নাম। তার স্বাদ, তার গন্ধ, আর তার খ্যাতি বাঙালির রসনায় এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাগনান ও কোলাঘাটের বাজারে রূপনারায়ণের ইলিশ নিয়ে তৈরি হয়েছে এক চরম বিভ্রান্তি এবং প্রতারণার অভিযোগ।

Advertisements

একসময় রূপনারায়ণ নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ত। ওই অঞ্চলের জেলেদের মুখেও হাসি ফুটত। বিশেষ করে বর্ষাকালে বাজার ভরিয়ে দিত এই নদীর সোনালি মাছ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপনারায়ণের জলে ইলিশের দেখা এখন ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই নদীতে ইলিশের প্রজনন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। যার ফলে ইলিশের উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে।

   

এই বাস্তব অবস্থার মাঝেও রূপনারায়ণের ইলিশের চাহিদা কিন্তু একটুও কমেনি। বরং দিনের পর দিন তার কদর বেড়েই চলেছে। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাগনান ও কোলাঘাটের বিভিন্ন বাজারে এখন সারা বছর ধরেই পাওয়া যাচ্ছে তথাকথিত ‘রূপনারায়ণের ইলিশ’। অথচ বাস্তবে রূপনারায়ণে এখন যেটুকু ইলিশ ধরা পড়ে, তা ওই চাহিদার সামান্য কণামাত্রও নয়। কিন্তু সাধারণ ক্রেতা তো সেটা জানেন না। তারা বাজারে গিয়ে বিশ্বাস করে নিচ্ছেন মাছওয়ালার মুখের কথা — “এই তো দাদা, একেবারে রূপনারায়ণের টাটকা ইলিশ!”

অভিযোগ, ওই বাজারগুলিতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাইরে, বিশেষ করে বাংলাদেশের পদ্মা নদী বা ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল থেকে ইলিশ এনে রূপনারায়ণের নামে বিক্রি করছেন। গায়ের রঙ মিলিয়ে, আকার দেখে বা বর্ষাকালের আবহে অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না — এ মাছ আদৌ রূপনারায়ণের কিনা। ফলত ঠকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, এই ভুয়ো রূপনারায়ণ ইলিশের দামও কিন্তু কম নয়। প্রতি কেজি ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ মাছ কাটার পর কিংবা রান্না করে খাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে, সেই স্বাদ বা গন্ধ নেই — যা রূপনারায়ণের ইলিশের বিশেষত্ব।

এই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানীয় মৎস্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠন দাবি তুলেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া ইলিশের উৎস সম্পর্কিত সঠিক তথ্য দিতে হবে। প্রশাসনের তরফ থেকেও যেন এই বিষয়ে তদারকি করা হয় এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় — সেই দাবি জোরালো হচ্ছে।

মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি কেউ রূপনারায়ণের নাম ভাঙিয়ে অন্য নদীর মাছ বিক্রি করে থাকেন, তা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অতএব, রূপনারায়ণের ইলিশ কিনতে গেলে এখন শুধু দাম নয়, সঙ্গে চাই সতর্কতাও। চোখ কান খোলা রেখে এবং খাঁটি উৎস থেকে কিনলেই কেবলমাত্র মিলবে সেই স্বাদ, যার নাম রূপনারায়ণ। নয়তো শুধু নামের মোহেই ঠকে যেতে হবে সাধারণ বাঙালি গৃহস্থকে।