নিউজ ডেস্ক, নয়াদিল্লি: সরাসরি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তোলাবাজ বলে উল্লেখ করলেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম (P Chidambaram)। এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা শনিবার বলেন, সাধারণ মানুষকে চরম দুর্বিপাকে ফেলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিদিন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকী, মাসের শুরুতেই বাড়াচ্ছে রান্নার গ্যাসের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম এখনও যথেষ্ট কম। তবুও মোদি সরকার পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের উপর নিজেদের ইচ্ছামত কর চাপিয়ে কার্যত তোলাবাজি চালাচ্ছে।
নিজের দাবির সপক্ষে চিদাম্বরম পরিসংখ্যানও পেশ করেন। দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেন, এক লিটার পেট্রোলের দাম যদি ১০২ টাকা হয় তাহলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলি প্রায় ৪২ টাকা। কিন্তু মোদি সরকার এক লিটার পেট্রোল থেকে নিজেদের কোষাগারের নিয়ে যাচ্ছে ৩৩ টাকা। পিছিয়ে নেই রাজ্যগুলিও। তারা প্রতি লিটার পেট্রোল থেকে ২৪ টাকা আয় করে। অর্থাৎ পেট্রোলের দামের উপরে ৩৩ শতাংশই রয়েছে কেন্দ্রের কর। এটা তোলাবাজি ছাড়া আর কি হতে পারে! মোদি সরকার এটা জানে না যে, পেট্রোপণ্যের উপর এভাবে কর চাপিয়ে দিয়ে আয় বাড়ানোর পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ। তাদের এই পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় গরিব মানুষকে কারণ দেশে গরিব ও বড়লোক সকলকেই সম পরিমাণ করে দিতে হয়।
চিদম্বরম পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলতে গিয়ে টেনে আনেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জমানার কথা।প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেন, মনমোহন সিংয়ের আমলে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে সময়েও পেট্রোল-ডিজেলের দাম দেশের বাজারে ৮০ টাকা ছাড়ায়নি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেক চড়া দামে পেট্রোল কিনে মনমোহন সরকার দেশের মানুষের কাছে সস্তায় পৌঁছে দিত। কিন্তু সে সময়ও বিজেপি তেলের দাম কমানোর জন্য প্রচুর আন্দোলন করেছে। সেই বিজেপি এখন কোথায় গেল? এখন তো আন্তর্জাতিক বাজারে এক ব্যারেল তেলের দাম ৭০ ডলার। তাহলে কিভাবে দেশের বাজারে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় পেট্রোলের দাম। পেট্রোলের দাম এভাবে কেন বাড়ছে মোদি সরকার তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষকে সবকিছু জানানো।
মোদি সরকার এখন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে দেশের বাজারেও পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। কিন্তু গত বছর যখন পেট্রোল-ডিজেলের দাম মাইনাসে চলে গিয়েছিল সে সময়ও কেন দেশে একটি টাকাও দাম কমেনি পেট্রোল-ডিজেলের। মোদি সরকার আগে তার উত্তর দিক। আসলে মোদি সরকার অত্যন্ত লোভী।
এই সরকারের আমলে দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ড থেমে গিয়েছে। তাই সরকারের আয়ের কোনও জায়গা নেই। আয় বাড়াতেই সরকার পেট্রোল ডিজেলের উপর কর চাপিয়ে চলেছে। এই একটিমাত্র উৎসের উপর এভাবে কর না চাপিয়ে সরকারের উচিত কিভাবে আয় বাড়ানো যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। কিন্তু মোদি ও তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন অর্থনীতির এই প্রাথমিক সূত্রগুলো বোধহয় জানেন না।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, করোনা বিধি শিথিল হওয়ায় প্রায় প্রতিটি দেশেই যানবাহনের চলাচল বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে জ্বালানির চাহিদা। তাই আগামী কয়েক মাসে চাহিদার তুলনায় জোগান না বাড়লে পেট্রোল-ডিজেলের দাম আরও বাড়তে পারে।