খাতায় কলমে ১২৩ জন এক্সিকিউটিভ মেম্বারের বঙ্গ বিজেপির স্টেট কমিটিতে নেই তিনি (Dilip Ghosh)। লোকসভা নির্বাচনের ১৮ থেকে কমে ১২ তে আসার পর বিধানসভা উপনির্বাচনে শোচনীয় ফলাফল (Dilip Ghosh)। আর সেই আবহে কলকাতার ইএম বাইপাস এর ধারে সায়েন্স সিটি অডিটরিয়ামে আগামী ১৭ই জুলাই বসতে চলেছে বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠক।
লোকসভা নির্বাচনে পরপরই বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে দিলীপ ফেরাও-এর (Dilip Ghosh) রব উঠেছে। ২০১৯ এ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন যে ফলাফল হয়েছিল, তার সাথে তুলনা করে আবারও দিলীপ ঘোষকেই দায়িত্ব দিতে সওয়াল করছেন দলের একাধিক আদি নেতা এবং কর্মীরা। কিন্তু মজার বিষয় বর্তমানে ১২৩ জনের এই রাজ্য কমিটিতে নাম নেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির। ফলে এই বৈঠকে দিলীপ ঘোষ থাকবেন কিনা সেই নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
কিন্তু দিলীপ না থাকলেও তাঁর একাধিক অনুগামী এই বৈঠকের থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সংগীত কি শোনা যাবে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে? সূত্রের খবর সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ এই বৈঠক হতে চলেছে রাজ্য কমিটির হেভিওয়েট নেতৃত্বদের তরফে বার্তা দেওয়ার। ফলে দীর্ঘ অভাব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আদি বনাম নব্যের হৈ-হট্টগোল বোধহয় দেখা যাবে না এই বৈঠকে।
পোর্টাল খুলে ১০০ জনকে নিয়ে আবারও শুভেন্দুর অভিযান! পদ্মবনের অধিকার বাঁচাতে রাজভবনই ভরসা?
কিন্তু তা সত্ত্বেও দিলীপ যেন কিছুটা কৌশলেই বঙ্গ রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এর আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের অভিমান এবং রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বেশ ভালই মাইলেজ নিয়েছেন তিনি। তারপরে একদম সাম্প্রতিক সময়ে নিজের পুরনো কেন্দ্র মেদিনীপুরে একটি রক্তদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ছিলেন এখনকার রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।
সেখানেই সংবাদমাধ্যমের সামনেই দিলীপ ঘোষের সমর্থকেরা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। সুকান্ত মজুমদারের সামনেই তাঁরা দাবি করতে থাকে তাঁদের দিলীপদাকেই পুনরায় রাজ্য সভাপতি করতে হবে। এমনকী সংবাদমাধ্যমের সামনেও তাঁরা তাঁদের স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের পর্যবেক্ষণটা কিন্তু একটু আলাদা। তাদের অনেকের মতেই, সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতির পদে ক্ষনিকের অতিথি। এবং এরকম পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সুকান্তের সম্পর্কে রসায়ন কিন্তু চোখে পড়ার মতো। মেদিনীপুরের রক্তদান সভাতে একসাথে উপস্থিত থাকা সেই সমীকরণের গভীরতার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর ‘উধাও’ শুভেন্দু অধিকারী’
আবার কারও কারও মতে সুকান্ত এবং দিলীপ দুজনেরই সংঘ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। বঙ্গে রাজনীতিতে সংঘের প্রভাব বৃদ্ধির যে সম্ভাবনার কথা বারবার শোনা যাচ্ছে, সেটাও এই সমীকরণের অন্যতম অঙ্ক হতে পারে। ফলে রাজ্য বিজেপিতে ২০২১ সালের পরে শুভেন্দু অধিকারীদের যে একচ্ছত্র শাসন চলেছে, তা বোধহয় এবার বন্ধের মুখে।
সেক্ষেত্রে রাজ্য কমিটিতে ফেরাটা কী শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা দিলীপ ঘোষের জন্য? বঙ্গ রাজনীতির অনেকগুলি অংক কিন্তু সেদিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর দিলীপ ফিরলে সবার আগে প্রবল চাপে যে পড়বেন শুভেন্দুই, তা কমবেশি সবাই স্বীকার করে নেন। এমনকি লোকসভায় পরাজয়ের পরপর, বিজেপির নেতা এবং প্রার্থীদের নিয়ে যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল সেখানে ছিলেন না শুভেন্দু। অথচ সেই বৈঠকে স্বমহিমায় ছিলেন দিলীপ। দিলীপ ঘনিষ্ঠদের মতে, মুখোমুখি এড়াতেই সেদিন উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা
এরকম পরিস্থিতিতে, রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে হারের পর্যালোচনার পাশাপাশি, দিলীপকে নিয়েও নিভৃতে আলোচনা চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও জেলা এবং ব্লক স্তরের বিভিন্ন নেতাদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই আক্ষেপ, সভাতে শুধু বড় বড় নেতারাই বলবেন। কর্মী বা ব্লক স্তরের নেতাদের শুধুই শুনে যেতে হবে সেই একই গতে বাঁধা বুলি।
কিন্তু তার মধ্যেও ছাই চাপা আগুনের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেখছেন কেউ কেউ। ২০২১ এর পরে ২০২৪, আশা জাগিয়েও সঙ্গী সেই ব্যর্থতাই। একাধিক কেন্দ্রের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে দিলীপ ঘোষ, দেবশ্রী রায়ের মতন প্রার্থীকে জেতা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে কেন হারের মুখে ঠেলে দেওয়া হল? সেই সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে নির্বাচনী ফান্ড নয় ছয়ের মত মারাত্মক অভিযোগ। সব মিলিয়ে বিজেপির নিচু তলার কোণঠাসা নেতাকর্মীরা এবার মঞ্চে থাকা রাজ্য কমিটির নেতৃত্বদের দিকে আঙুল তুলবেন কী? আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিজেপির এক পুরনো নেতার মতে মেদিনীপুরের রক্তদানটা শুধু একটা টিজার ছিল। ট্রেলারটা হয়ত দেখা যাবে আগামী ১৭ তারিখে। এবার দেখা দরকার শুভেন্দু-সুকান্তদের রাজ্য কমিটি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে কিভাবে তা সামাল দেয়। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে, বঙ্গ বিজেপির এই মুহূর্তে নেপথ্যের নায়ক কিন্তু একজনই। তিনি ২০১৯ এর বিজেপির ব্যাপক সাফল্যের ক্যাপ্টেন দিলীপ ঘোষ। ব্যর্থতার কৈফিয়ৎ দেওয়ার পাশাপাশি, এখন তাঁর ছায়ার সাথেও লড়াই করতে হচ্ছে শুভেন্দুদের।