তিলোত্তমার ঐতিহ্য ট্রাম। কত গানে, কবিতায়, সিনেমায়, সাহিত্যে জড়িয়ে কলকাতার ট্রাম। কালের গতিতে শহরের রাজপথে ট্রামের অস্তিত্ব যাতে একেবারে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সে জন্য বহুদিন থেকেই সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে রেলমন্ত্রী থাকার সময় তার হাত ধরেই দুরন্ত এক্সপ্রেস গতি পেয়েছিল। ভারতীয় রেলে এমন রঙের ব্যবহার সেই প্রথম এবং হয়তো সেটাই শেষ। এবার শহরের পথে নতুন ট্রামের ডিজাইন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। পুজোর পরেই শহরের পথে পথে দেখা যাবে চোখ ধাঁধানো রঙচঙে ট্রাম।
ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য শুধু নয়, নস্টালজিয়াও। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম চলে না। আর সেই ট্রামই যেন এখন ফেয়ারওয়েলের অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ঐতিহ্য হয়ে থেকে গেলেও হেরিটেজ তকমা জোটেনি তার। তবে হেরিটেজ-তিলক প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের রাজপথে ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখাই তার লক্ষ্য। তাই পুরনো ট্রামকে নতুন সাজে আরও সুন্দর, আরও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ট্রামের ডিজাইন ও রঙ হবে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ মতোই। নিজের হাতে ডিজাইন করেন তিনি। পঞ্চমীর দিন নতুন ট্রাম চালু করার ঘোষণা করলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, মেট্রো যে ভাবে মহানগরে ডালপালা মেলছে, তাতে কি ট্রামের স্মৃতিটুকুও আর থাকবে এই শহরের বুকে? তিনি বলেন, “ট্রাম চলবে আগামী দিনে। শহরে আমরা ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখব। কলকাতার স্মারক হিসেবে চারটি রুটে ট্রাম চালাব।”
পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “ধর্মতলা-গড়িয়াহাট এবং বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ রুটে ট্রাম চলছে। নতুন ট্রাম চলবে চারটি রুটে।” ট্রামের রুট আর রঙ নিয়ে পরে আরও বিশদে জানানো হবে ।
ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটটি হেরিটেজ রুট। এখান দিয়েই ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম পরিষেবার সূচনা হয়। নতুন রুটে ধর্মতলা, খিদিরপুর অবশ্যই থাকবে। পাশাপাশি ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া অবধি ট্রাম চালানো হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। ভিক্টোরিয়ার সামনে তৈরি হচ্ছে ট্রামের জন্য ট্যুরিস্ট প্ল্যাটফর্ম।
১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটার পথে শহরে ট্রামের চাকা গড়িয়েছিল প্রথমবার। সে ছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম। যদিও বেশি দিন চলেনি। বছর দশেক আগেও শহরে ৩৭টি ট্রামের রুট ছিল। বন্ধ হয়ে থাকা রুটগুলিতে দুর্ঘটনা এড়াতে এখন লাইনের উপর পিচের আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। তবে লাইন বেঁচে থাকলেও ট্রাম চলে না শহরের প্রাচীনতম ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে।