আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতি (corruption) মামলায় সিবিআই (CBI) আদালতে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে, যা নিয়ে হাসপাতাল মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুক্রবার, আলিপুর আদালতে জমা পড়া প্রায় হাজার পাতার এই চার্জশিটে (charge sheet) প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের (Sandeep Ghosh) নামসহ মোট পাঁচজনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলিও। অভিযোগ উঠেছে, আখতার আলি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বিশেষ করে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ, সরঞ্জাম কেনা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে।
তবে, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে শিক্ষার্থীদের ‘হাউসস্টাফশিপ’-এর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের এই মেয়াদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সন্দীপ ঘোষ এই নিয়ম লঙ্ঘন করে নিজের ঘনিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের হাউসস্টাফশিপের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতেন।
এছাড়া, হাসপাতালের সরঞ্জাম কেনার টেন্ডারে দুর্নীতি, চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ প্রক্রিয়া চালানো এবং অন্য অনেক বিষয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আসছিল, কিন্তু সন্দীপ ঘোষের ক্ষমতার কারণে সে বিষয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এদিকে, ৯ অগস্টে ঘটে যাওয়া আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়া এক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তে নামার পর সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সিবিআই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে এবং তদন্ত চালিয়ে যায়। ওই ধর্ষণ-কাণ্ডের পর হাসপাতালের দুর্নীতির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে এবং সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আরও তীব্র তদন্ত শুরু হয়।
চার্জশিটে যে সব নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং আফসার আলি খানেরও নাম রয়েছে। তারা সবাই সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া, আশিস পাণ্ডের নামও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি এই মামলার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
এই চার্জশিটের জমা পড়ার পর হাসপাতাল মহলে নতুন করে আতঙ্ক এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্ত এখন আরও গভীর হয়েছে, এবং তারা জানায় যে, শীঘ্রই আরও সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।