ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর মেদিনীপুরের শ্মশানে মৃতদেহের ভিড়

অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস! দুঃস্বপ্নের যাত্রা! ভয়াবহ, হ্রদয়বিদারক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ২৯৫ জন (রবিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত) এবং আহতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা…

অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস! দুঃস্বপ্নের যাত্রা! ভয়াবহ, হ্রদয়বিদারক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ২৯৫ জন (রবিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত) এবং আহতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতরা ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকেই আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে অনেকেই এ রাজ্যের বাসিন্দা। কিছু আহতদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সরকারের উদ্যোগে।

ওড়িশার প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে সামনের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। স্বাভাবিকভাবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক সহযোগিতার দায়িত্ব এই জেলাতে। রবিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনো পর্যন্ত ১২৪ জন আহতকে আনা হয়েছে, মৃতদেহ এসেছে ২৫ টি, তবে পরিচয়হীন ১৭০ টি দেহ বালেশ্বর থেকে সরানো হয়েছে ভুবনেশ্বরের পাঁচটি হাসপাতালে। পরিচয় উদ্ধারে প্রকাশ করা হচ্ছে ছবি।”

বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর পশ্চিম মেদিনীপুরেও খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। রবিবার দুপুরে সেই কন্ট্রোল রুমে বৈঠক করেন জেলাশাসক খুরশেদ আলী কাদরী , পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সৌম্যশংকর সারেঙ্গী, ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ আরও কয়েকজন।

জেলাশাসক এদিন জানান, “বালেশ্বরে এই দুর্ঘটনার পর আমাদের জেলা থেকে ১১৬ টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। ২৪টি বাস যাত্রীদের উদ্ধার করে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে। ২৫টি মিনি ট্রাক দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার ওড়িশা সীমান্তে সোনাকোনিয়াতে একটি ক্যাম্প করে যাত্রীদের উদ্ধার করে চিকিৎসা চলছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১২৪ জন আহত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছে। চিকিৎসার পর ১৮ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৫ টি মৃতদেহ এসেছে ময়নাতদন্তের জন্য। এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তারা। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনজন মারা গিয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবারের লোকেরা দেহ নিয়ে গিয়েছে। কন্ট্রোল রুম খুলে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন,” বালেশ্বর এলাকাতে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের মোট ১৭০ টি পরিচয়হীন দেহ রয়েছে। তাদের দেহগুলি সরিয়ে ভুবনেশ্বরের পাঁচটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাবতীয় ছবি তথ্য প্রকাশ করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও নিখোঁজ রয়েছে তিনজন। তবে তারা কোন ট্রেনে চেপেছিল, আদৌ চেপেছিল কিনা সেগুলি পরিষ্কার নয়৷”

অন্যদিকে জ্ঞানেশ্বরীকান্ডের মত পরিচয়হীন দেহের ভিড় হতে পারে, বা শবদাহ করার চাপ হতে পারে। এমন সম্ভাবনা থেকে মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে থাকা বিকল হয়ে যাওয়া ইলেকট্রিক চুল্লি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে রবিবার সকাল থেকে।

মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানান,” মৃতদেহর ভিড় বাড়ছে মর্গে। পরিস্থিতি মাথায় রেখে সম্প্রতি বিকল হয়ে গিয়েছিল যে ইলেকট্রিক চুল্লি সেটিকে মেরামতের কাজ শুরু করা হচ্ছে। জ্ঞানেশ্বরী কান্ডে শবদাহ করার চাপ তৈরী হয়েছিল৷ “

তবে রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন বিধায়িকা জুন মালিয়া, সাংসদ শান্তনু সেন প্রমুখেরা।