চাকরির স্বচ্ছতায় কারা এগিয়ে? তা নিয়ে প্রত্যেক দিনই শাসক বনাম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তরজা লেগেই রয়েছে। আদালতের নির্দেশে চাকরি বাতিলের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে গেলেও যোগ্য বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে কোনও সদুত্তর মিলছে না সরকারের তরফে৷ দেখতে দেখতে ৭৪০ দিনে (After 740 Days) পড়ল তাঁদের ধর্না। নিরূপায় চাকরি প্রার্থীদের ভবিষ্যত কী? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
তাঁদের বক্তব্য, প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতির বন্যা কিন্তু বাস্তবায়ন আদৌও হয়নি। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ, অবিরাম বর্ষা, অথবা কনকনে শীতের মধ্যেও ন্যায্য চাকরি ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়েই দুর্নীতির কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের ধর্ণা অব্যাহত। ২০১৬ সালে প্রথম এস এল এস টি এর নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক- শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন কর্তৃক পরীক্ষা গৃহীত হয়েছিল।
স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজের তৈরি গেজেট লঙ্ঘন করেই অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের যে পথ সুকৌশলে তৈরি করেছিল, সেই পথে যে ক্রমাগতভাবে দুর্নীতির জাল বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার প্রকাশ্য বিস্ফোরণ ঘটে। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীগণ এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন শুরু করেছিল ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে ২৯ দিনের টানা অনশনের মধ্য দিয়ে। তাদের সেই আন্দোলন আজও অব্যাহত।
৭৪০ দিন ধরে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ব্যানারে নবম-দ্বাদশের হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীগণ ধর্ণায় চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত সকল যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের অবিলম্বে চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে অনড় । যদিও সরকার আইনগত জটিলতার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না এমনটাই জানা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বিধানসভায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন মেনেই সকলের নিয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চাকরি প্রার্থীদের তরফে জানানো হয়েছে যে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের রাজ্য নেতৃত্ব কামরুজ্জামান বিশ্বাস জানিয়েছেন, আজ থেকে রোজা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রখর রোদ্রে আমরা ভীষণ কষ্টে ধর্ণা মঞ্চে রয়েছি । ৭৪০ দিন অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সরকার এখনো কেন সমস্যার সমাধান করছে না।একের পর এক অজুহাত খাড়া করে সরকার যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের মূল্যবান দিন গুলি কেন নষ্ট করে দিচ্ছে ? আমরা কোনো অজুহাত শুনতে চাই না,অবিলম্বেই সকল যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ চাই। সরকার নিয়োগে বিলম্ব করলে আমরা এবার বৃহত্তম আন্দোলনের পথে অগ্রসর হবো।
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো- অর্ডিনেটর সুদীপ মন্ডল জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মহাশয় একাধিক বার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।
৭৪০ দিন ধরে যোগ্য চাকরি প্রার্থীগণ গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্ণায় বসে চোখের জলে দিন অতিবাহিত করেছেন । কেউ রাখেনি কথা,কেউ বোঝেনি বঞ্চিতদের চোখের জলের ব্যথা। বুকভরা ব্যথা নিয়ে চাকরি প্রার্থীগণ এখনো লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন। চাকরি প্রার্থীদের রাজ্য নেতৃত্ব সুদীপ মন্ডল আরও জানিয়েছেন যে , আমরাই যোগ্য চাকরি প্রার্থীগণ। দুর্নীতির কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত। আর কোনো রকম অজুহাত শুনতে চাই না, এবার আমরা অতি দ্রুত নিয়োগপত্র হাতে চাই।