লোনের টাকা প্রায় শেষ, তবুও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হসপিটালম্যান

শুরু হয়ে গিয়েছিল নাইট কার্ফু। শীতের রাত। রাস্তা ফাঁকা। ছুটে চলেছে একটা টোটো। ঘন্টা দুয়েক পরেই নতুন তারিখ, নতুন দিন। চেনা লড়াই। তিলোত্তমা ভালবেসে নাম…

লোনের টাকা প্রায় শেষ, তবুও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হসপিটালম্যান

শুরু হয়ে গিয়েছিল নাইট কার্ফু। শীতের রাত। রাস্তা ফাঁকা। ছুটে চলেছে একটা টোটো। ঘন্টা দুয়েক পরেই নতুন তারিখ, নতুন দিন। চেনা লড়াই।

তিলোত্তমা ভালবেসে নাম রেখেছে ‘হসপিটালম্যান’ (Hospitalman)। আসল নাম পার্থ কর চৌধুরী। জীবনের পাঁচটা বছর দিয়েছন মানুষদের সেবায়। আগামী দিনেও এইভাবেই থাকবেন পাশে এই তাঁর অঙ্গীকার।

ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসছিল টোটোর সাঁইসাঁই শব্দ। ফোনের স্পিকার ছু্ঁয়ে যাচ্ছিল হিমেল হাওয়া। কিন্তু কর্তব্যে অবিচল হসপিটালম্যান। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তখন।

“শহর কলকাতা আগের থেকে সচল। কিন্তু হাসপাতাল বা চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র একইরকম’, বললেন পার্থ কর চৌধুরী। “বদলের মধ্যে এটুকুই বলবো, গতবারের লকডাউনের সময় অনকেই বাড়ি ফিরতে পারেননি। শহরেই আটকে পড়েছিলেন। এবার তেমনটা হয়নি। লোকে বাড়ি ফিরতে পারছে।”

পুলকার চালিয়ে উপার্জন করতেন এক সময়। লকডাউনের পর একেবারে বসে গিয়েছে গাড়ি। বন্ধ উপার্জন। “লোন নিয়ে কোনোরকমে চালাচ্ছি। সেটাও তো শেষ হয়ে এল”, বললেন হতাশার সুরে। “পাশে রয়েছেন স্ত্রী-কন্যা। তাঁরাই সাহায্য সাধ্য করেন মতো।”

সরকারের কাছ থেকে সাহায্য চাননি? “হাসপাতালে রোজ যাই। লোকজনকে খাবার দিই, পাশে থাকার চেষ্টা করি। নেতা-মন্ত্রীরা নিজেরাও তো দেখেছেন। আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের লড়াই আমাদেরকেই লড়তে হয়।” উত্তরের শুরু দিকে গলার স্বর যেন চলে গিয়েছিল কোনো খাদের গভীরে। শেষে আবার সেই দৃপ্ততা- আমাদের লড়াই আমাদেরকেই করতে হবে।

Advertisements

সরকার সমালোচনাও করলেন নির্ভয়ে। শ্রমজীবী ক্যান্টিন হোক কিংবা মা ক্যান্টিন, মানুষের সাহায্যের বদলে ক্ষতিই করছে বেশি, মনে করেন পার্থ। “দু’মুঠো খাওয়ার জন্য মানুষকে পরিশ্রম করতে হতো। এখন সামান্য টাকায় খাবার পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ পরিশ্রম করবে কেন? কাজের উদ্যোমটাই তো হারিয়ে যাচ্ছে।”

প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জনের মুখে অন্ন তুলে দেন হসপিটালম্যান। পাঁচ বছর ধরে বজায় রেখেছেন ধারাবাহিকতা। কাজের আগে নিজে রেইকি করে দেখেন। নাহলে অপাত্রে দান করার সম্ভবনা প্রবল। হসপিটাল কার্ড দেখে তবেই খাবার তুলে দেন রুগীদের পরিজনের পাতে। “নাহলে কি বলতো, তুমি কিছু না জেনে কাউকে কিছু দিলে। একটা কম্বলই ধরো। সেটা সে দু’দিন ব্যবহার করে বিক্রি করে দিল। আমি সেটা চাই না। যার সত্যিই প্রয়োজন আমি শুধু তার পাশেই থাকতে চাই।”

প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন মানুষের অন্নদাতা পার্থ কর চৌধুরী ওরফে ‘হসপিটালম্যান’। “গ্রামে ফিরেও মানুষ আমাকে ফোন করে। খোঁজ নেয় কেমন আছি। এটাই তো পাওয়া।”