আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: দীর্ঘক্ষণ একটানা অফিসে কাজ করতে করতে কোমড়ে ব্যথা করছে। অথবা চেয়ার ছেড়ে উঠলেই কোমড়ে খিঁচ ধরছে। বাড়িতে ফিরে বিছানায় পড়লেই আর উঠতে ইচ্ছে করছে না? পাশ ফিরতেই টান ধরছে কোমড়ে? এইরকম হাজার একটা সমস্যায় জর্জরিত যুব সমাজ। আইটি সেক্টরে কর্মরত পার্থ সারথী চক্রবর্তী একটানা চেয়ারে বসতে বসতে পিঠের মদ্যিখানে ব্যথা শুরু হয়েছে।
বছর পঁচিশের ছেলে পিঠের ব্যথার কাবু আবার অন্যদিকে সরকারী চাকুরে পার্থ ঘোষের আবার চেয়ারে বসতে বসতে পায়ের থাইয়ে খুব টান। লোকের পরামর্শে গদি দেওয়া চেয়ার ছেড়ে কাঠের চেয়ারে বসতে শুরু করেছেন। জিম ট্রেনার শতদ্রু ভারী ওয়েট তুলতে গিয়ে কোমড়ে হ্যাঁচকা খেয়েছে। এখন হাঁটতে গেলে কষ্ট হয় কিন্তু সে গুগুল দেখেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। ডাক্তারের পরামর্শ সে এখনও নেয়নি।
ব্যথা আমাদের জীবনের অতপ্ৰত ভাবে জড়িয়ে থাকা একটি বিষয়। প্রেমের বিষয়ই হোক কিংবা লাগার বিষয় হোক, ব্যথা পাওয়া খুব কমন একটি বিষয়। তাই ব্যথা চিনে নেওয়ার উপায় বাতলে দিলেন বিশিষ্ট পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাঞ্জলি রায়।
১) সায়টিকা পেন-সাইটিক নার্ভের উপর থেকে চাপ সৃষ্টি করে যে ব্যথাটা হয়। মূলত যে দিকে বেশী চাপ পড়ে সেই দিকেই এই ব্যথা শুরু হয়। কোমড়ের নীচের অংশ থেকে এই ব্যথা শুরু হয়। দেখা গিয়েছে কোমড়ের নীচের একদিক থেকেই এক ব্যথা শুরু হয়ে পায়ের দিকে নামে। দীর্ঘদিন সাইটিকার ব্যথা থাকলে পায়ে জ্বালা ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। এক্সরে, এমআরআই-এর মাধ্যমে এই সাইটিকা পেনকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
২) দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করলে সাধারণত ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে ব্যথা হয়। এই ব্যথা মূলত হয় বসে থাকার ধরণ থেকে। আমরা যদি বসে বসে থাকার ধরণ থেকে কোন ব্যথাটা হচ্ছে সেটা যদি বুঝতে পারি তাহলে সহজেই ব্যায়ামের মাধ্যমে এই ব্যথা নির্মূল করা যাবে।
৩) তবে ব্যথা যদি খুব তীব্র হয় অথবা বসার পজিশন পাল্টেও যদি সেই ব্যথা বারেবারে ফিরে ফিরে আসে। ব্যথার ওষুধ খেয়েও সেই ব্যথা যদি আবার ফেরত আসে এবং রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় সঙ্গে মানসিক অবসাদে নিয়ে যায় তাহলে সেই ব্যথা কিন্তু সিরিয়াস পেন। তাই ফেলে না রেখে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪) হাড়ের ব্যথা নার্ভের ব্যথা বা মাসল পেনের মতো নয়। সহজে ব্যথার ওষুধ খেয়ে এই ব্যথা কমে না। হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার ব্যথা অন্যরকম। সহজে এই ব্যথা সারতে চায় না। ভিটামিন ডি-এর অভাবের জন্যও হাড়ের ব্যথা হয়।
৫) দুটি ভাট্রিবার মধ্যে ডিস্ক বেরিয়ে এসে নার্ভকে চাপ দেয় তখনই নার্ভের ব্যথা শুরু হয়। নার্ভের ব্যথা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো হয়। ঝিনঝিন একটা ব্যথা হয়। অনেকের এমনটা ঘটে অনেক দূর চলতে গিয়ে কারুর পায়ে এমন একটা ব্যথা ধরল মনে হবে পুরো পা অবশ হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনা কিন্তু নার্ভ পেনের জন্য ঘটে।
৬) মাসল পেন এখন খুব কমন! পেশীর ব্যথা তখনই যখন দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করার ফলে পেশীর ব্যথা হয়। আজকাল আমরা কেউই নিয়ম করে যোগব্যায়াম করি না। মাসল পেন বা পেশীর ব্যথা সরানো সবচেয়ে সোজা।
৭) কিছু কিছু ব্যথা খুবই সাংঘাতিক। ভয় দেখানোর জন্য নয় শুধু মাত্র ব্যথার উপসর্গ থেকেই কারুর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আবার হঠাৎ মাসল পেন থেকে অন্য একটি জটিল রোগ ধরা পড়ল এমন দেখা গিয়েছে। তবে সাধারণত ব্যথা থেকে জটিল কোনও রোগ ধরা পড়ে না।
(বক্তব্যটি অভিজ্ঞ পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ দেবাঞ্জলি রায়ের সঙ্গে কথা বলে লেখা হয়েছে। এই লেখাটি বিশেষ কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই লেখা তাই অসুবিধা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।)