জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে সংঘটিত এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় (Pahalgam Terror Attack) ২৬ জনের প্রাণহানির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে।” এই হামলা, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দিয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “কাশ্মীর থেকে আসা অত্যন্ত বিরক্তিকর খবর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতের অসাধারণ জনগণ আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং গভীর সমবেদনা পাচ্ছেন। আমাদের হৃদয় আপনাদের সঙ্গে রয়েছে!”
হামলার বিবরণ
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) দুপুর আনুমানিক ২:৩০টায় পহেলগামের বাইসারান উপত্যকায়, যা তার মনোরম তৃণভূমি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে খ্যাত, জঙ্গিরা পর্যটকদের উপর অন্ধভাবে গুলি চালায়। এই স্থানটি শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। হামলাকারীরা, যারা সামরিক পোশাক পরিহিত ছিল, খাবারের দোকানে সময় কাটানো, পনিতে চড়া বা পিকনিক উপভোগ করা পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় ৪ থেকে ৬ জন জঙ্গি জড়িত ছিল, যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি এবং একজন স্থানীয় কাশ্মীরি। ঘটনাস্থল থেকে এম৪ এবং একে-৪৭ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক—একজন ইসরায়েলি এবং একজন ইতালীয়—রয়েছেন।
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), যা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি প্রক্সি গোষ্ঠী, সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিরা সম্ভবত জম্মুর কিশতওয়ার থেকে দক্ষিণ কাশ্মীরের কোকেরনাগ হয়ে বাইসারানে প্রবেশ করেছিল।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলাকে ‘জঘন্য কাণ্ড’ বলে নিন্দা করে বলেছেন, “হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।” তিনি তাঁর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই ভারতে ফিরে আসছেন। মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য পাঠিয়েছেন। শাহ মঙ্গলবার রাত ৯টার পর শ্রীনগরে পৌঁছে রাজভবনে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক নলিন প্রভাত, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর পরিচালক তপন ডেকা উপস্থিত ছিলেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের অতিথিদের উপর এই হামলা একটি জঘন্য কাজ। এই হামলার কারিগররা পশু, অমানবিক এবং নিন্দার যোগ্য।” তিনি জানান, মৃত্যুর সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সমবেদনা
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, যিনি তাঁর স্ত্রী উষা এবং সন্তানদের নিয়ে ভারতে চার দিনের সফরে রয়েছেন, এই হামলার শিকার পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “উষা এবং আমি পহেলগাম, ভারতে সংঘটিত বিধ্বংসী জঙ্গি হামলার শিকারদের প্রতি সমবেদনা জানাই। এই ভয়াবহ হামলায় শোকাহতদের জন্য আমাদের চিন্তা এবং প্রার্থনা রয়েছে।” ভ্যান্সের এই বিবৃতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে ‘নৃশংস অপরাধ’ বলে নিন্দা করে ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার এটিকে ‘জঘন্য জঙ্গি হামলা’ বলে নিন্দা করেছেন, এবং ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার বলেছেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানিকর জঙ্গি হামলায় আমরা দুঃখিত এবং হতবাক।” ইউক্রেন, ইরান এবং ফ্রান্সের দূতাবাসগুলিও এই হামলার নিন্দা করেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রভাব
নিরাপত্তা বাহিনী বাইসারান উপত্যকা ঘিরে ফেলেছে এবং সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তদন্তের জন্য পহেলগামে পৌঁছবে। হামলাটি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা, বিশেষ করে ৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া অমরনাথ যাত্রার আগে। ২০২৪ সালে কাশ্মীরে ৩৫ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন, এবং এই ঘটনা পর্যটকদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে।
ট্রাম্প এবং ভ্যান্সের সমবেদনা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে। এই হামলা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে, এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এখন জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।