মানুষের সেবা করতেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি: মুকুল

News Desk: বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল মেঘালয়ের কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। জল্পনাকে সত্যি প্রমাণ করে…

mukul sangma

News Desk: বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল মেঘালয়ের কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। জল্পনাকে সত্যি প্রমাণ করে বুধবার ১১জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন মুকুল সাংমা।

সাংমা ও ১১ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা এক লাফে ১৭ থেকে কমে হচ্ছে মাত্র ৫ জন। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিরোধী দলের মর্যাদা চেয়ে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছেন মুকুল সাংমা।

আরও পড়ুন: Meghalaya: মেঘের দেশে ‘কংগ্রেসের শেষের কবিতা’ লিখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা

হঠাৎই মুকুল সাংমা কেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। মুকুল সাংমা সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, মানুষের সেবা করার জন্যই তাঁরা বাধ্য হয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মেঘালয়ে কংগ্রেসই যে সরকার গড়বে এটা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা সরকার গড়তে পারেননি। এনপিপি ও বিজেপি জোট কীভাবে রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল সেটা আজ সকলেই জানে। ওই ঘটনার পর রাজ্যে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করা তো দূরের কথা, বরং নিয়মিতই কংগ্রেস সদস্যদের ভাঙানোর চেষ্টা শুরু হয়। যা রোখার মত কোনও কাজ করেনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

মুকুল সাংমা বলেছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের দিশার অভাবেই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতেও ব্যর্থ কংগ্রেস। জনবিরোধী কাজ প্রতিরোধ করা ও সরকারের ভুলগুলি তুলে ধরার যে দায়িত্ব বিরোধী দলের রয়েছে সেটা পালন করতে পারেনি কংগ্রেস। দলের নীতি মেনে চলতে গিয়ে জনস্বার্থের সঙ্গেও তাঁদের প্রতি পদে পদে আপোস করতে হয়েছে।

মুকুল সাংমা স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাজ্যের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁদের যা করা উচিত ছিল সেটা তাঁরা করে উঠতে পারেননি। কংগ্রেসে থাকলে প্রকৃত বিরোধী ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে না। সে কারণেই তাঁরা দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুকুল অভিযোগ করেছেন, দলীয় হাইকমান্ডের ব্যর্থতার কারণেই কংগ্রেস কখনওই দেশের প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারেনি।

উল্লেখ্য, মেঘালয়ে কংগ্রেসের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই একটা ভাঙন দেখা যাচ্ছিল। এই ভাঙনের মূল কারণ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভিনসেন্ট এইচ পালার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই। মুকুলের অভিযোগ, ভিনসেন্টকে প্রদেশ সভাপতি করার আগে দলের হাইকমান্ড তাঁর সঙ্গে কোনও রকম আলোচনাই করেননি। সে কারণে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন মুকুল। পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর মতপার্থক্য আরও বেড়েছে।

দলের দুই প্রবীণ নেতার মধ্যে এই বিরোধ মেটাতে কিছুদিন আগেই দেখা করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। অনেকেই মনে করেছিলেন, এবারের মতো হয়তো রাহুল পরিস্থিতি সামালে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ভাবনাচিন্তা যে ঠিক ছিল না মুকুলের দলত্যাগ তারই প্রমাণ।

গত মাসে কলকাতায় এসে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মুকুল সাংমা। ওই সাক্ষাতের পর মুকুলের তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যদিও তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছিলেন, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেছেন।

সম্প্রতি কলকাতায় এসে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গেও দেখা করেন মুকুল। এই সাক্ষাতকে তিনি সৌজন্য বলে জানিয়েছিলেন। করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১১ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে মুকুলের তৃণমূল কংগ্রেসে চলে আসা নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেসের কাছে বড় ধাক্কা।