মুম্বই: বৃহস্পতিবার রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে মুম্বইয়ের (Mumbai) পাওয়াই-এর স্টুডিও (Powai Studio) থেকে ১৭ জন শিশু সহ মোট ১৯ জনকে উদ্ধার করে মুম্বই পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মারা পড়েন নিজেকে চিত্রপরিচালক বলে দাবী করা রোহিত আর্য (Rohit Arya)। কিন্তু মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ভিডিও বার্তায় ‘কারও সঙ্গে কথা’ বলতে চেয়েছিলেন তিনি।
বলেছিলেন, ‘আমি কোনও সন্ত্রাসবাদী নই। টাকার জন্য এসব করছি না। আমার টাকা চাই না’! বারবার ‘সরল, নীতিগত’ কিছু দাবী আছে বলে উল্লেখ করছিলেন রোহিত আর্য। কিন্তু ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেই সামনে ১৯ জনকে আটক (Hostages) রাখার পেছনে উঠে এল ২.৪ কোটি টাকার রহস্য!
মহারাষ্ট্রের শিক্ষা দফতর স্বীকার করেছে, যে ওই স্বঘোষিত চিত্রপরিচালক তথা অপ্সরা মিডিয়াকে ২০২২ -২৩ এ প্রজেক্ট ‘লেটস চেঞ্জ’-এর জন্য একটি নগর স্যানিটেশন অভিযানের নেতৃত্ব এবন্মগ তথ্যচিত্র তৈরি করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এই উদ্যোগে ৫৯ লক্ষ শিক্ষার্থীকে ‘স্বচ্ছতা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) মনিটর’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
২০২৩-এর ৩০ জুন একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে ৯.৯ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২৩-২৪ সালে এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘মুখ্যমন্ত্রী মাঝি শালা সুন্দর শালার’ জন্য ২০.৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ‘স্বচ্ছতা মনিটর’-এর জন্য ২ কোটি টাকাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন রোহিত
বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা দফতর জানায়, ওই উদ্যোগে আর্য কর্তৃক জমা দেওয়া প্রকল্পের নথিপত্র অসম্পূর্ণ ছিল। শুধু তাই নয়, নথিতে বিজ্ঞাপন, জনবল, কারিগরি সহায়তা এবং ‘লেটস চেঞ্জ’ তথ্যচিত্রের (Lets Change Documentary) প্রদর্শনের জন্য স্পষ্টতই অতিরিক্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত ছিল, বলে দাবী করা হয়েছে। এই ত্রুটির কারণেই প্রকল্পটিকে বাস্তবায়িত করা যায়নি, বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষা দফতর।
এর ঠিক এক বছর পর আর্য রাজ্যের সমস্ত স্কুলের জন্য এই প্রকল্পটি পুনরায় বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেন এবং ২.৪২ কোটি টাকার দাবী জানান। কিন্তু ‘চিত্রপরিচালক’ রোহিত আর্যর নতুন প্রপোজালেও একাধিক কারচুপি ধরা পড়ে। মহারাষ্ট্র সরকারের তদফে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণের জন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নিচ্ছিলেন রোহিত আর্য (Rohit Arya)।
কোনোরকম টেন্ডারের তোয়াক্কা না করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা তুলেছিলেন তিনি, বলে অভিযোগ। গত বছর আগস্ট মাসে ছাত্রছাত্রীদের থেকে নেওয়া সমস্ত টাকা রোহিতকে ফেরত দিতে বলা হয় এবং এফিডেভিডে ‘স্বচ্ছতা মনিটর’ প্রকল্পের জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোনোরকম টাকা তিনি নেবেন না বলতে বলা হয়। কিন্তু এর কোনটাই রোহিত আর্য করেননি বলে, সরকারি সূত্রে খবর। গত বছরের বিধানসভা নির্বাচন এবং বিজেপি-নেতৃত্বাধীন মহাযুতি প্রশাসনের প্রধান হিসেবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রত্যাবর্তনের পর এই উদ্যোগটি ভেঙে দেওয়া হয়।



