গুহায়াটি: অসমের শ্রীভূমি জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফের সংঘাতের আবহ। সম্প্রতি ভাঙা-হরিনগর সীমান্ত সেক্টরে একদল বাংলাদেশি নাগরিক ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের (BSF) মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা ও মুখোমুখি অবস্থার ঘটনা সামনে এসেছে। ঘটনাটির ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা দুই দেশের সীমান্তে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকায়। বর্ষার পর নদীর জল নেমে গিয়ে নতুন করে কিছু জমি বেরিয়ে আসে। অভিযোগ, বাংলাদেশের দিকের কিছু লোকজন সেই জমিতে প্রবেশ করে সবজি চাষ শুরু করেন। বিএসএফের ১৭০ ব্যাটালিয়নের টহলদল যখন বিষয়টি নজরে আনে, তারা সঙ্গে সঙ্গে চাষাবাদের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে। বিএসএফের দাবি, নতুন গঠিত এই ভূমি সম্পূর্ণভাবে ভারতের সীমার মধ্যে পড়ে এবং বাংলাদেশের নাগরিকরা বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন।
এই ঘটনার পর বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বাঁশের বেড়া ও অস্থায়ী ছাউনি ভেঙে দেয়। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরা। তারা দল বেঁধে ঘটনাস্থলে আসে এবং ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একাধিক ব্যক্তি বিএসএফ সদস্যদের উদ্দেশে স্লোগান ও কটূক্তি করছেন। বাংলাদেশের দিকের কিছু মানুষ ‘ভারতীয় সেনা অনধিকার প্রবেশ করেছে’ বলেও অভিযোগ তোলেন।
এদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিএসএফের তরফে জানানো হয়, ঘটনাস্থল ভারতের সার্বভৌম সীমার মধ্যে অবস্থিত এবং বাংলাদেশের দিকের কিছু ব্যক্তি নদীর জল কমে বেরিয়ে আসা নতুন জমি দখল করার চেষ্টা করেছিল।
এক বিএসএফ আধিকারিক জানান, “সুরমা নদীর জল কমে নতুন জমি দেখা দেওয়ার পর থেকেই এ ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের কারণে সীমান্তরেখার কাছে জমির অবস্থান বদলায়, ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা অনেক সময় ভারতের দিকের জমিতেও প্রবেশ করে পড়েন।”
ঘটনার পরপরই সীমান্তে পরিস্থিতি শান্ত করতে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB)-এর মধ্যে এক বিশেষ ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপে সম্মত হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন বিভ্রান্তি এড়াতে সীমান্ত এলাকায় যৌথ টহল, দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্য বিনিময় আরও জোরদার করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তেজনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় গ্রামগুলির মানুষ জানান, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই তাদের জীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। তবে বিএসএফ-বিডিজি বৈঠকের পর আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এই ঘটনার ফলে আবারও প্রশ্ন উঠেছে নদী ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে গঠিত নতুন ভূমি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রশাসনিক বিভ্রান্তি কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত। সীমান্ত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘটনাগুলি ভবিষ্যতে বড় সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে, তাই দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।


