এক ঢিলে কয় পাখি? তেজ প্রতাপের শ্যালিকাকে টিকিট দিয়ে জল্পনা উসকে দিলেন তেজস্বী!

পাটনা: ২০২৫ বিধানসভা ভোটে আসন দখলের লড়াইয়ে নতুন চমক দিলেন লালু-পুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav)। দল হোক বা পারিবারিক জটিলতা, এক ঢিলে দুই বা তাঁর বেশি পাখি মারতে মরিয়া তেজস্বী। যখন দাদা তেজ প্রতাপের (Tej Pratap yadav) সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ঐশ্বর্যের সম্পর্কই আদালতের ফাইলে বন্দী, তখণ দাদার শ্যালিকাকে নির্বাচনের ময়দানে নামালেন লালুর ছোট ছেলে তেজস্বী।

Advertisements

জানা গিয়েছে, তেজ প্রতাপের স্ত্রী ঐশ্বর্যের জ্যাঠতুতো বোন করিশ্মা রাইকে পারসা সিট থেকে নির্বাচনে লড়ার টিকিট দিয়েছে আরজেডি (RJD)। যদিও, আগের বিধানসভা নির্বাচনেও আরজেডির টিকিট চেয়েছিলেন তেজ প্রতাপের শ্বশুর চন্দ্রিকা রাইয়ের বড় ভাই বিধাঞ্চন্দ্র রাইয়ের মেয়ে করিশ্মা। কিন্তু তেজ এবং ঐশ্বর্যর সম্পর্কের টানাপড়েনের মাঝে তা বানচাল হয়ে যায়।

বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দারোগা প্রসাদ রাইয়ের নাতনি করিশ্মা। তেজ দারোগা রাইয়ের ছোট ছেলে, প্রাক্তন মন্ত্রী চন্দ্রিকা রাইয়ের মেয়ে ঐশ্বর্যর সঙ্গে তেজ প্রতাপের বিয়ে হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ঘটনা আদালত অবধি পৌঁছয়।

যার জেরে রাজনীতির ময়দানে ব্যাক ফুটে চলে যায় লালু যাদবের পরিবার। তবে এবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাতনি তথা তেজ প্রতাপের শ্যালিকাকে তেজস্বীর নির্বাচনী টিকিট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এটা কি তেজস্বীর রাজনৈতিক ‘ক্ষতি পূরণের’ পদক্ষেপ, নাকি যাদবদের ভোট ধরে রাখার কৌশল?

গত বছর করিশ্মা টিকিট চাইলেও দেয়নি আরজেডি। এবার তেজ প্রতাপের সঙ্গে পরিবার এবং রাজনীতি, উভয় দিক থেকেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন লালু প্রসাদ যাদব। তেজ প্রতাপ আসন্ন নির্বাচনে নিজের জেজেডি দল নিয়ে মহুয়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ছেন।

পারিবারিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক সমীকরণের ভারসাম্য বজায় রেখে লালু যাদবের পারসা আসন থেকে করিশ্মা রাইকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত, এই অঞ্চলের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পারসা থেকে টিকিট দিয়ে তেজস্বী মনে হচ্ছে এক তীর দিয়ে একাধিক বাজি ধরছেন।

পারসা থেকে জেতার বাজি

Advertisements

বিহারের রাজনীতিতে দারোগা প্রসাদের রাজনৈতিক প্রভাব কারও অজানা নয়। তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পারসা নির্বাচনী এলাকাতে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। ১৯৫২ সালে পারসা আসন থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক এবং পরে ১৯৭০ সালে মুখ্যমন্ত্রীর হন করিশ্মার দাদু দারোগা রাই। তাঁর ছেলে চন্দ্রিকা রাই বাবার ধারা বজায় রেখে ২০১৫ সালে আরজেডির টিকিটে পারসা আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন।

কিন্তু তেজস্বীর সঙ্গে ঐশ্বর্যর সম্পর্কে ছেদ পড়ায় ফের জেডিইউ শিবিরে ফিরে যান চন্দ্রিকা। ছোটে লাল রাই জিতে বিধায়ক হন, কিন্তু পরে তিনিও দল ছেড়ে জেডিইউতে যোগ দেন। এবার ২০২৫ নির্বাচনে এই পারসা আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আকর্ষণীয় হতে চলেছে। পারসা কেন্দ্রে জেডিইউ-এর ছোটে লাল রাইয়ের বিপরীতে দারোগা রাইয়ের উত্তরসূরি করিশ্মাকে ময়দানে নামাচ্ছেন তেজস্বী।

রাজনীতির চালে দাদাকে বার্তা?

শ্যালিকাকে টিকিট দিয়ে যে দাদা তেজ প্রতাপকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তেজস্বী তা বলাই বাহুল্য। ব্যক্তিগত বিবাদে ২০২০ সালে তৈরি হওয়া দূরত্ব কি এবার তবে শেষ হতে চলেছে? পাশাপাশি, চন্দ্রিকা রাই দলবদলু হয়ে জেডিইউ-তে গেলেও ভাইঝিকে কি সমর্থন করবেন না? দানা বাঁধছে প্রশ্ন। অন্যদিকে, বিহারে ১৫ শতাংশ যাদব ভোটারকে আরেজডির অন্যতম শক্তি হিসেবে ধরা হয়।

কিন্তু ঐশ্বর্যর সঙ্গে বিবাদ হোক বা অনুস্কা যাদবের সঙ্গে ছবি তোলা, তেজ প্রতাপের কার্যকলাপে যাদব সম্প্রদায় লালুর জ্যেষ্ঠ পুত্রের উপর ক্ষুব্ধ বলেই মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, তেজস্বী করিশ্মা রাইকে প্রার্থী করে যাদব সম্প্রদায়ের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন, বলে শুরু হয়েছে জল্পনা।