হাইকোর্টের বিতর্কিত মন্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের মানবিক রায়ে ছাড় পকসো অভিযুক্তের

supreme-court gives relief to pocso victim

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (supreme-court) একটি যুগান্তকারী রায়ে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন (পকসো) এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রায় ঘোষণা করেছেন বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ, ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এই মামলার অনন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisements

মামলার পটভূমি

অভিযুক্ত ব্যক্তি, যিনি অপরাধের সময় ২৪ বছর বয়সী ছিলেন, একটি নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ওই নাবালিকা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে এই দম্পতি তাদের সন্তানসহ একসঙ্গে বসবাস করছেন। এই পরিস্থিতি এবং ভুক্তভোগীর বর্তমান মানসিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্ট এই অসাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

কমিটির তদন্ত ও প্রতিবেদন (supreme-court)

মামলাটির তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের (supreme-court) নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল, যার মধ্যে ছিলেন একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট, একজন সমাজবিজ্ঞানী এবং শিশু কল্যাণ কর্মকর্তা। এই কমিটি নিমহান্স (NIMHANS) বা টিআইএসএস (TISS)-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল।

কমিটির কাজ ছিল ভুক্তভোগীর বর্তমান জীবনযাত্রা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং তার ইচ্ছা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। কমিটি ভুক্তভোগীকে সরকারি কল্যাণ প্রকল্প এবং উপলব্ধ সহায়তা সম্পর্কে অবহিত করে এবং তার সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নেওয়ার সুযোগ দেয়।

কমিটির প্রতিবেদন একটি সিল করা খামে সুপ্রিম কোর্টে (supreme-court) জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগী, যিনি এখন প্রাপ্তবয়স্ক, অভিযুক্তের প্রতি গভীর মানসিক সংযুক্তি অনুভব করেন এবং তাদের ছোট পরিবারের প্রতি অত্যন্ত আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।

২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলার পর আদালত উল্লেখ করেন, তিনি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন এবং দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা শেষ করার পর পেশাগত প্রশিক্ষণ বা খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ দেওয়া উচিত।

ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, টিকবে না পাকিস্তান

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

সুপ্রিম কোর্ট (supreme-court) তার রায়ে বলেন, “সমাজ তাকে বিচার করেছে, আইনি ব্যবস্থা তাকে ব্যর্থ করেছে এবং তার নিজের পরিবার তাকে পরিত্যাগ করেছে।” আদালত আরও উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগী, যিনি এখন প্রাপ্তবয়স্ক, ঘটনাটিকে অপরাধ হিসেবে দেখেন না। “যদিও আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অপরাধ, তবে ভুক্তভোগী এটিকে অপরাধ হিসেবে গ্রহণ করেননি।

আইনি অপরাধের কারণে তার মানসিক আঘাত হয়নি, বরং এর পরিণতিগুলি তাকে কষ্ট দিয়েছে। পুলিশ, আইনি ব্যবস্থা এবং অভিযুক্তকে শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য তার অবিরাম লড়াই তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,” আদালত বলেন। “এই মামলার তথ্যগুলি সবার জন্য চোখ খুলে দেওয়ার মতো।”

Advertisements

আদালত বিবেচনা করেন যে ভুক্তভোগীর অভিযুক্তের প্রতি মানসিক সংযুক্তি এবং তাদের বর্তমান পারিবারিক জীবনের বিশেষ পরিস্থিতি ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে ‘সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার’ প্রদানের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগের যথেষ্ট কারণ।

কলকাতা হাইকোর্টের বিতর্কিত রায়

এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে (supreme-court) পৌঁছায় কলকাতা হাইকোর্টের ২০২৩ সালের একটি বিতর্কিত রায়ের পর। হাইকোর্ট অভিযুক্তের ২০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে তাকে খালাস দেয় এবং কিশোরী মেয়েদের যৌন ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে বিতর্কিত মন্তব্য করে।

হাইকোর্ট বলেছিল, সমাজ এই ধরনের ঘটনায় কিশোরী মেয়েকে ‘পরাজিত’ হিসেবে বিবেচনা করে। এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সুপ্রিম কোর্ট এই রায় এবং মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি নিজে থেকে গ্রহণ করে।

২০২৪ সালের ২০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে অভিযুক্তের দোষী সাব্যস্ততা পুনর্বহাল করে। তবে, তৎক্ষণাৎ শাস্তি ঘোষণা না করে আদালত ভুক্তভোগীর বর্তমান পরিস্থিতি এবং তার মতামত জানার জন্য একটি তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেয়।

ভুক্তভোগীর বর্তমান অবস্থা

সুপ্রিম কোর্ট (supreme-court) উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগীকে প্রাথমিকভাবে সচেতন পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। “ব্যবস্থাটি তাকে একাধিক স্তরে ব্যর্থ করেছে,” আদালত বলেন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত লক্ষ্য করেন, ভুক্তভোগী তার পরিবারের প্রতি গভীরভাবে সংযুক্ত এবং তিনি তার স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে সুখী জীবনযাপন করছেন। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত শাস্তি আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

আদালত ভুক্তভোগীর জন্য আর্থিক সহায়তা এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদানের পরামর্শ দেন। তারা বলেন, ভুক্তভোগীর দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাকে পেশাগত প্রশিক্ষণ বা খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

সমাজ ও আইনি ব্যবস্থার প্রতি বার্তা

এই রায় সমাজ এবং আইনি ব্যবস্থার প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আইনি অপরাধের চেয়ে এর পরিণতি ভুক্তভোগীকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। এই মামলা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবারের ভূমিকা এবং আইনি প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলি তুলে ধরেছে। আদালতের এই রায় ভবিষ্যতে অনুরূপ মামলায় আরও সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের (supreme-court) এই রায় পকসো আইনের কঠোর প্রয়োগের মধ্যেও মানবিক দৃষ্টিকোণের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি সমাজ ও আইনি ব্যবস্থাকে ভুক্তভোগীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।