নয়াদিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বর: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (Nomadic Community) জাতীয় নির্বাহী সদস্য দুর্গা দাস সম্প্রতি যাযাবর সম্প্রদায়ের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি এই সম্প্রদায়ের জন্য সংগঠনের কাজের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “যাযাবর সম্প্রদায় আমাদের দেশের একটি প্রাচীন সম্প্রদায়, যারা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তাদের অবদানের মাধ্যমে জাতির সেবা করে আসছে।
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে এই সম্প্রদায় (Nomadic Community) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা এটি লক্ষ্য করে তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে নির্যাতনের শিকার করেছিল। ফলে, স্বাধীনতার পরেও এই সম্প্রদায় উপেক্ষিত, নিপীড়িত এবং বঞ্চিত জীবনযাপন করছে। যখন আমাদের সংগঠন কাজ শুরু করে এবং স্বয়ংসেবকরা ধীরে ধীরে সেবামূলক কার্যক্রমে জড়িত হতে থাকে, তখন এই সম্প্রদায়ের জন্যও প্রচেষ্টা শুরু হয়।
তখনই উপলব্ধি হয় যে এটি একটি বিশাল সম্প্রদায় এবং তাদের জন্য বিশেষ কাজ করা প্রয়োজন। বর্তমানে, যাযাবর সম্প্রদায়ের জন্য ছয় ধরনের উদ্যোগ চালানো হচ্ছে।”দুর্গা দাসের বক্তব্যে যাযাবর, অর্ধ-যাযাবর এবং ডি-নোটিফায়েড উপজাতিদের (ডিএনটি, এনটি, এসএনটি) ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৭১ সালের ক্রিমিনাল ট্রাইবস (Nomadic Community)অ্যাক্টের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়কে ‘জন্মগত অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা তাদের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক কলঙ্ক এবং বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এই আইন বাতিল করলেও, এই সম্প্রদায় এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ইদাতে কমিশনের (২০১৪) রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ১,৪০০টির বেশি যাযাবর ও ডি-নোটিফায়েড সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, যাদের মধ্যে ২৬৯টি সম্প্রদায় এখনও শ্রেণিবদ্ধ নয়।
আরএসএস এই সম্প্রদায়ের কল্যাণে সেবা ভারতীর মাধ্যমে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুর্গা দাস জানান, সংগঠন বর্তমানে ছয়টি প্রধান উদ্যোগের মাধ্যমে যাযাবর সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করছে। (Nomadic Community)এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি, বাসস্থানের ব্যবস্থা, আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
সেবা ভারতীর মাধ্যমে যাযাবর সম্প্রদায়ের ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং, স্বাস্থ্য বীমা, এবং জাতীয় ও রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে জীবিকার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে বাসস্থান নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্গা দাস আরও বলেন, “এই সম্প্রদায়ের মানুষদের মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তাদের ঘন ঘন স্থান পরিবর্তনের কারণে রেশন কার্ড, আধার কার্ড বা জাতি শংসাপত্রের মতো নথি পেতে সমস্যা হয়, যা তাদের সরকারি কল্যাণ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করে।”
তিনি জানান, আরএসএস স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সম্প্রদায়ের জন্য শংসাপত্র প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করছে। এছাড়া, ইদাতে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, যাযাবর সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গঠন এবং তাদের জন্য পৃথক নীতি প্রণয়নের দাবি আরএসএস সমর্থন করে।
যাযাবর সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণেও আরএসএস (Nomadic Community)গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দুর্গা দাস বলেন, “এই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সঙ্গীত এবং হস্তশিল্প দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা তাদের এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য কাজ করছি।” সংগঠনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
আরএসএস-এর এই উদ্যোগগুলি যাযাবর সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে, দুর্গা দাস স্বীকার করেন যে, এই সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধানে এখনও অনেক পথ বাকি। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল এই সম্প্রদায়কে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসা এবং তাদের প্রতি সামাজিক কলঙ্ক দূর করা।
জিএসটির কৃতিত্ব দাবি! অথচ ‘বিড়ি ট্যাক্সে’ বিহারকে অপমান: কংগ্রেসকে তুলোধোনা নির্মলার
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, কিন্তু আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এই উদ্যোগগুলি কেবল যাযাবর সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নেই নয়, ভারতের সামাজিক সমন্বয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।