৭৩ বছরে রেকর্ড ভাঙল মার্চের অকাল বৃষ্টি! জেনে নিন কেন উলটে গেল পূর্বাভাস

এ বছর দেশে আবহাওয়ার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, যখন উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশে বৃষ্টি দেখা যায়, তখন বৃষ্টি হয়নি এবং এর কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙেছে।

Record-breaking March rain in India

এ বছর দেশে আবহাওয়ার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, যখন উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশে বৃষ্টি দেখা যায়, তখন বৃষ্টি হয়নি এবং এর কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙেছে।  অন্যদিকে মার্চ মাসের অবিরাম বর্ষণে (Record-Breaking March Rain) মানুষকে চাদরে ঢেকে দিতে বাধ্য করেছে।

মার্চ মাসের শুরু থেকেই তাপ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর গ্রীষ্ম তীব্র হতে চলেছে। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের সব অনুমান ভুল প্রমাণ করেছে। কিছুদিন ধরেই দেশের অধিকাংশ রাজ্যে অবিরাম বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ চলছে। অনেক জায়গায় তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য পতন রেকর্ড করা হয়েছে। এমতাবস্থায় অধিদপ্তরকে এপ্রিল ও মে-জুন মাসের সম্ভাব্য আবহাওয়ার নতুন প্রতিবেদন জারি করতে হবে।

ফেব্রুয়ারির পুরো মাস এবং তারপরে মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহ জাতীয় রাজধানীতে উষ্ণ ছিল, যখন শেষ দুই সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম রেকর্ড করা হয়েছে। এখানে মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে, গত দুই সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম রেকর্ড করা হয়েছে।

৭৩ বছর পর শীতলতম মার্চ
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) তথ্য অনুসারে, জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে মার্চ মাসের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ০.৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। দিল্লিতে এই ৩৪তম বার, যখন মার্চ মাসে তাপমাত্রা এত কম হয়েছে। একই সঙ্গে মার্চের শেষ দুই সপ্তাহের তাপমাত্রা ৭৩ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এটি গত ৭৩ বছরে ১০টি শীতলতম সপ্তাহের মধ্যে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৯ মার্চ পর্যন্ত দেশের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এভাবে, ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম মার্চের তাপমাত্রা এত কম।

হিসেব বিপরীত, মার্চ কিভাবে ঠান্ডা ছিল
তবে এখানে এটাও লক্ষণীয় যে, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরমের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, গত সব অনুমানের বিপরীতে মার্চ মাসটা কিভাবে এত শীতল ছিল?

এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘তাপমাত্রার এই সহজ পতন হয়েছে একই সঙ্গে দুটি পশ্চিমী ধকল সক্রিয় হওয়ার কারণে। এই সময়কালে, রাজস্থান এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সঞ্চালনের মাত্রা বেশি ছিল, যখন উপরের ট্রপোস্ফিয়ারে প্রতি ঘন্টায় ১২০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত বাতাস বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর থেকে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়িয়েছিল। এসব কারণে মার্চ মাসে দেশের অনেক এলাকায় অমৌসুমি বৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে।

এদিকে, রাজস্থান থেকে আরও একটি ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেন্স সক্রিয় রয়েছে। এর কারণে শনিবারও জাতীয় রাজধানী সহ উত্তরপ্রদেশের অনেক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের মতে, এই অসময়ের বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমতাবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে দেশ অভ্যন্তরীণ সরবরাহে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করা পর্যন্ত গম রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।