ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং, যিনি ধর্ষণের (Ram Rahim) মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন, তিনি হরিয়ানার রোহতকের সুনারিয়া কারাগার থেকে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ২০২৫) ৪০ দিনের প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। এটি গত আট বছরে তাঁর ১৪তম প্যারোল।
৫৭ বছর বয়সী এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু, যিনি ২০১৭ সালে দুই শিষ্যার ধর্ষণ এবং ২০১৯ সালে সাংবাদিক রাম চন্দ্র ছত্রপতির হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি এই প্যারোলের সময় তাঁর সিরসা সদর দপ্তরে অবস্থান করবেন। তবে, তাঁর বারবার প্যারোল পাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গুরমিত রাম রহিম ২০১৭ সালের আগস্টে পঞ্চকুলার একটি বিশেষ সিবিআই আদালত কর্তৃক দুটি ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এছাড়াও, ২০১৯ সালে তিনি সাংবাদিক রাম চন্দ্র ছত্রপতির হত্যার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান।
তবে, ২০২৪ সালের মে মাসে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ২০০২ সালে ডেরার প্রাক্তন ম্যানেজার রঞ্জিত সিংয়ের হত্যা মামলায় তাঁকে এবং চারজনকে খালাস দেয়, তদন্তে ত্রুটির কারণ উল্লেখ করে। এই খালাস সত্ত্বেও, তিনি ধর্ষণ এবং সাংবাদিক হত্যার মামলায় সাজা ভোগ করছেন।
এই সাম্প্রতিক প্যারোলটি হরিয়ানা গুড কন্ডাক্ট প্রিজনার্স (টেম্পোরারি রিলিজ) অ্যাক্ট, ২০২২-এর অধীনে মঞ্জুর করা হয়েছে। ডেরার মুখপাত্র ও আইনজীবী জিতেন্দ্র খুরানা জানিয়েছেন, গুরমিত রাম রহিম এই সময় সিরসায় তাঁর ডেরা সদর দপ্তরে থাকবেন। তিনি এর আগে এপ্রিলে ২১ দিনের ফার্লো এবং জানুয়ারিতে ৩০ দিনের প্যারোল পেয়েছিলেন, যা দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের (৫ ফেব্রুয়ারি) আগে মঞ্জুর হয়েছিল।
এই ঘন ঘন প্যারোল এবং ফার্লোর কারণে শিখ সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন সংগঠনের তরফে তীব্র সমালোচনা উঠেছে। শিরোমণি গুরুদ্বারা পরবন্ধক কমিটি (SGPC) এই প্যারোলের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিল, যুক্তি দিয়ে যে এটি সমাজে ভুল বার্তা দেয়।
SGPC-এর সাধারণ সম্পাদক গুরচরণ সিং গ্রেওয়াল বলেন, “গুরমিত রাম রহিমের মতো গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তির বারবার মুক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকর।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শিখ বন্দীদের (বন্দি সিং) মুক্তির দাবিতে সরকার নীরব থাকলেও রাম রহিমের প্যারোল মঞ্জুরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
সামাজিক মাধ্যমেও এই প্যারোলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ধর্ষণ ও হত্যার দোষী ব্যক্তি কীভাবে বারবার প্যারোল পাচ্ছেন? এটি বিচার ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলছে।”
গুরমিত রাম রহিমের ডেরা সচ্চা সৌদার হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশে বিপুল সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। তাঁর প্যারোলের সময় তিনি প্রায়ই ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নেন, যেমন মাদকবিরোধী প্রচারণা এবং সৎসঙ্গ।
ডেরার একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাঁর কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০০,০০০ মানুষ মাদক ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে, সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর প্যারোলের সময় রাজনৈতিক প্রভাব এবং নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, কারণ তাঁর মুক্তি প্রায়ই হরিয়ানা বা দিল্লির নির্বাচনের আগে ঘটে।
হরিয়ানা সরকারের তরফে বলা হয়েছে, প্যারোল মঞ্জুরে জেল ম্যানুয়াল এবং হরিয়ানা গুড কন্ডাক্ট প্রিজনার্স অ্যাক্ট অনুসরণ করা হয়। তবে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অক্ষত বাজপাই বলেন, “প্যারোল এবং ফার্লো অসাধারণ পরিস্থিতির জন্য, যেমন পারিবারিক মৃত্যু বা বিবাহ, কিন্তু এটি বিচারের আদেশকে উপেক্ষা করার জন্য নয়।” এই ঘন ঘন প্যারোলের ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
‘তেজস’ কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে হালকা সুপারসনিক যুদ্ধবিমান হয়ে উঠল?
গুরমিত রাম রহিমের প্যারোল নিয়ে বিতর্ক ভারতের বিচার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর মুক্তির সময় তিনি সিরসায় থাকবেন এবং স্থানীয় পুলিশ তাঁর কার্যক্রমের উপর নজর রাখবে। এই ঘটনা আগামী দিনে আরও বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।