ক্ষমতা হারিয়ে বন্দি হয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী, গ্রেফতারি থেকে জ্যোতি বসুকে বাঁচিয়েছিলেন!

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ক্ষমতাচ্যুত হয়ে (Pakistan)  পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের ঠিকানা হয় দেশত্যাগ বা জেলখানা। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে এই ধারা চলছে। পাক ইতিহাসে প্রথমবার গ্রেফতারি ও জেলে যাওয়া…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ক্ষমতাচ্যুত হয়ে (Pakistan)  পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের ঠিকানা হয় দেশত্যাগ বা জেলখানা। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে এই ধারা চলছে। পাক ইতিহাসে প্রথমবার গ্রেফতারি ও জেলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন (Huseyn Shaheed Suhrawardy) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আচমকা পাক সেনা লাল চোখে তাঁকে বলেছিল-আপনাকে আর দরকার নেই! সেই প্রথমবার কোনও পাক প্রধানমন্ত্রীর জেলে যাওয়া। ১৯৬০ সাল থেকে এই ধারা শুরু। যার সাম্প্রতিকতম নাম ইমরান খান (Imran Khan)। তিনিও গ্রেফতার হয়েছেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীদের জেলযাত্রার তালিকায় জুলফিকর আলি ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো,  নওয়াজ শরিফ সহ কয়েকজন আছেন। আচমকা ক্ষমতা হারানোর তালিকা যোগ করলে স্বাধীনোত্তর পাকিস্তানের সিংহভাগ প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টরা বারবার কুর্সি থেকে ঘাড় ধাক্কা খেয়েছেন।

১৯৬০ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাক সেনার নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতারের ঘটনাটি তৎকালীন সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রবল আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন সংবাদ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজনীতিও আলোড়িত হয়েছিল। কারণ ভারত ভাগ হবার আগে যুক্ত বাংলা প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সোহরাওয়ার্দী। মুসলিম লীগের সরকার চলছিল। আর বিরোধী বেঞ্চে কমিউনিস্ট পার্টি।

যুক্ত বঙ্গের রাজনীতিতে সোহরাওয়ার্দী ছিলেন শেষ প্রধানমন্ত্রী পদাধিকারী। ভারত ভাগের পর সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেন। তৎকালীন বঙ্গ আইনসভা (এখনকার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা) থেকে তিনি সরে গিয়ে পাক রাজনীতির বিশেষ আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

সোহরাওয়ার্দীর বঙ্গ শাসনের সময়টি অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক আগে রাজনৈতিক বন্দি মুক্তির দাবি প্রবল আকার নিয়েছিল। যুক্ত বঙ্গের আইনসভার তিন কমিউনিষ্ঠ সদস্য জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ ও রূপনারায়ণ রায়ের নেতৃত্বে বন্দি মুক্তি আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। জ্যোতি বসু ও সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সেই ঘটনাবহুল সময়টিতে  এমনও ঘটনা ঘটেছিল যা চমকপ্রদ। ব্রিটিশ পুলিশের হাত থেকে জ্যোতি বসুকে বাঁচিয়ে এনেছিলেন সোহরাওয়ার্দী।

যুক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয় জ্যোতি বসুকে। নির্দেশ ছিল বেধড়ক পেটানোর!

কী ঘটেছিল সেদিন আইনসভার প্রাঙ্গনে? আত্মজীবনী ‘যত দূর মনে পড়ে’ বইতে লিখেছেন কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু। তাঁর বর্ণনা- “কলকাতা পুলিশের কুখ্যাত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সামসুদ্দোহা তদারকি করছে। পুলিশ সার্জেন্টরা সবাই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। ব্যাপারটা কি খোঁজ করতে চেষ্টা করলে সামসুদ্দোহা আমাকে ধাক্কা দিল,আমার জামা ছিঁড়ে গেল। সামসুদ্দোহা পুলিশের লোকেদের আমাকে দেখিয়ে নির্দেশ দিল ওকে পেটাও। তখন কংগ্রেস সদস্য ধীরেন মুখার্জি আমাকে আড়াল করে পুলিশকে বললেন ইনি আইনসভার একজন সদস্য-তোমরা এটা করতে পার না। তখন দোহা আমাকে গ্রেপ্তার করে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার হেফাজতে দিয়ে দিল। আইনসভার কক্ষে খবর পৌঁছলে সদস্যদের আবেদন অনুযায়ী অধিবেশন মুলতুবি রাখা হলো। সুরাবর্দী (সোহরাওয়ার্দী)  ছুটে এলেন। তখন সমবেত মানুষের মধ্যে প্রচন্ড বিক্ষোভ। মুসলিম লীগের ছাত্ররা দোহার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। সুরাবর্দী আমাকে ডাকলেন- ‘জ্যোতি এখানে এস’।  আমি বললাম-‘কী করে আসব, আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’।  সুরাবর্দী: কেউ তোমায় গ্রেপ্তার করেনি -তুমি এস’।….আমি ছেঁড়া জামা নিয়ে আইনসভার কক্ষে ঢুকলাম।”

সেদিন ক্ষমতাবলে জ্যোতি বসুকে রক্ষা করেন সোহরাওয়ার্দী। পরে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন।ক্ষমতা হারিয়ে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। করাচি থেকে কলকাতায় সেই সংবাদটা আসার পর জ্যোতি বসুর অভিব্যক্তি কেমন ছিল তা অবশ্য জানা যায়না।