পটনা ২৫ নভেম্বর: বিহারের রাজনীতিতে ফের চাঞ্চল্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধান পরিষদে বিরোধী দলনেত্রী রাবড়ি দেবীকে প্রায় ২০ বছর পর পাটনার ১০ সার্কুলার রোডের আইকনিক বাংলো ছাড়তে বলা হয়েছে। নতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ভবন নির্মাণ বিভাগ এই নির্দেশ দিয়েছে, এবং রাবড়িকে নতুন বাড়ি হিসেবে হার্ডিং রোডের সেন্ট্রাল পুল হাউস নম্বর ৩৯ বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির নিয়ম মেনে চলার প্রসঙ্গে দেখা হচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এটাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে চিৎকার করছে। কিন্তু একই আরজেডি যখন সাম্প্রতিককালে তাদের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মায়ের বিরুদ্ধে অশ্লীল অপমানজনক উক্তি করেছে, তখন কোনো ক্ষমা চেয়েছে কি?
বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপ, তাপমাত্রা নেমে ১৬ ডিগ্রিতে
এই দ্বৈত মানদণ্ড বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক জ্বালিয়েছে, যা ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর এনডিএ-এর বিজয়ের পরিণতি বলে মনে হচ্ছে।১০ সার্কুলার রোডের বাংলো বিহারের রাজনীতির একটা প্রতীক। ২০০৫ সাল থেকে লালু প্রসাদ যাদবের পরিবার এখানে বাস করছে প্রথমে লালু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, পরে রাবড়ি দেবী ১৯৯৭-২০০৫ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্বে ছিলেন। এই বাড়িটা শুধু পরিবারের আবাস নয়, আরজেডির রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থলও ছিল।
লালু, তেজস্বী যাদব, তেজপ্রতাপ যাদব সবাই এখান থেকে রাজনীতির খেলা খেলেছেন। ২০১৯ সালে পটনা হাইকোর্টের এক রায়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য আজীবন বাংলো বরাদ্দকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়, যাতে রাবড়িসহ অন্যদের নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তখন রাবড়ির বিরোধী দলনেত্রীর পদের কারণে এই বাংলো ধরে রাখা যায়। এবার ২০২৫-এর নির্বাচনে এনডিএ ২০২ আসন জিতে ল্যান্ডস্লাইড জয় পেয়েছে, আর মহাগঠবন্ধন মাত্র ৩৫ আসনে সীমাবদ্ধ।
নতুন সরকারের আসন গ্রহণের পর ভবন বিভাগের জয়েন্ট সেক্রেটারি শিব রঞ্জনের সইয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে রাবড়িকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন বাড়িটা হার্ডিং রোডে, যা বিরোধী দলনেত্রীর জন্য উপযুক্ত। আরজেডির প্রতিক্রিয়া তীব্র। দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেছেন, “এটা স্পষ্ট প্রতিহিংসা। এনডিএ সরকার বিজেপির নির্দেশে লালু পরিবারকে লক্ষ্য করে আঘাত হানছে। রাবড়ি জি বিধান পরিষদের নেত্রী, তাঁর অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।
এটা রাজনৈতিক হয়রানির চেষ্টা।” তেজস্বী যাদবও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেছেন, “বাবা-মায়ের যুগ থেকে আমরা লড়াই করে এসেছি, এমন চাপে আমরা ভাঙব না। নতুন বাড়ি নেব, কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ব।” দলের কর্মীরা দাবি করছে, এটা লালু পরিবারকে দুর্বল করার কৌশল, বিশেষ করে ইআরসিটি কেলেঙ্কারির মামলায় তাদের জড়িত থাকায়। আরজেডি বলছে, এই বাংলো ছেড়ে দেওয়া মানে তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অবমাননা।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য আজীবন বাংলো নেই, এবং নতুন বরাদ্দ অনুসারে পরিবর্তন হয়েছে। নিতীশ কুমারের জেডিইউ নেতা বিজয় কুমার সিনহা বলেছেন, “এটা রাজনৈতিক নয়, আইনি। সকলের জন্য সমান নিয়ম।”কিন্তু এই অভিযোগের মধ্যে একটা কথা মনে পড়ে যায় যে আরজেডি আজ প্রতিহিংসার চিৎকার করছে, সেই দলের মঞ্চ থেকে কতবার অশ্লীল অপমান উড়ে এসেছে।
বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে দার্ভাঙ্গায় রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-র মঞ্চে আরজেডি-কংগ্রেসের জোটের এক কর্মী প্রধানমন্ত্রী মোদীর মৃত মায়ের বিরুদ্ধে অশ্লীল গালাগালি দিয়েছে। ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, যাতে হিন্দিতে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে মোদির মাকে অপমান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে এক সভায় আবেগপ্রবণ হয়ে বলেছিলেন, “আমার মা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, ১০০ বছর বয়সে চলে গেলেন।
তবু আরজেডি-কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে তাঁকে অপমান করা হলো। এটা শুধু আমার মায়ের নয়, বিহারের সব মায়ের অপমান। আমি ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিহারের মানুষ করবে না।” বিজেপি নেত্রীরা বলেছেন, “যারা মায়ের অপমান করে ক্ষমা চায় না, তারা আজ বাংলো ছাড়তে বললে প্রতিহিংসা বলে চিৎকার করে। এটা দ্বৈত মানদণ্ড।” নিতীশ কুমারও ঘটনাটা নিন্দা করেছিলেন, বলেছিলেন, “এমন অশ্লীলতা বিহারের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে।”





