শেষ ল্যাপে নীতীশ কুমার: ক্লান্তির প্রাচীর পেরিয়ে কি ফিরবেন ‘সারভাইভার-ইন-চিফ’?

Nitish Kumar Bihar Election 2025

বিহারের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা নেতা—নীতীশ কুমার। একুশ বছর ধরে রাজ্যের প্রশাসনিক দিকনির্দেশনা তাঁর হাতেই। তবু ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই হয়ে উঠেছে। দুই দশকের শাসনে জমে থাকা অ্যান্টি ইনকামবেন্সি-র ভার, বয়স ও স্বাস্থ্যের প্রশ্নে বিরোধীদের কটাক্ষ, আর নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ’—সব মিলিয়ে এই নির্বাচনে নীতীশ কুমার যেন শেষ বারের মতো নিজের উত্তরাধিকার বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছেন।

Advertisements

দ্বিতীয় তথা শেষ দফার ভোটের আগে গোটা বিহার আজ একটাই প্রশ্নে মুখর—‘আরও একবার কি “সুশাসন বাবু” পারবেন ইতিহাস পুনর্লিখন করতে?’

   

দুই দশকের মুখ্যমন্ত্রী, এক ‘সারভাইভার’-এর গল্প

এখন নীতীশের নবম মেয়াদ। রাজনৈতিক টিকে থাকার পাঠ তিনি যেন নিজেই লিখেছেন। কখনও বিজেপি, কখনও আরজেডি—এক দশকে চারবার বদলেছেন জোটসঙ্গী। এই রাজনৈতিক কসরতের কারণেই অনেকেই তাঁকে ডাকেন “পল্টু রাম”, কিন্তু বাস্তব বলছে—এই বদলই তাঁকে দিয়েছে অবিশ্বাস্য স্থায়িত্ব।

সদ্য ভোটের আগে নিজের ভিডিও বার্তায় নীতীশ বলেন, “২০০৫ সালে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন ‘বিহারি’ শব্দটাই ছিল একরকম অপমানের প্রতীক। আমরা সেই বিহারকে বদলে দিয়েছি—আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন—সব ক্ষেত্রেই।”

তাঁর শাসনের সাফল্যের তালিকায় রয়েছে রাজ্যের অপরাধ কমানো, ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন, লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ, এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির নীতি। তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—যিনি এক সময় পরিবর্তনের প্রতীক ছিলেন, তিনি কি এখনও পরিবর্তনের ভাষা হতে পারেন?

‘ইঞ্জিনিয়ার’ থেকে প্রশাসক: নীতীশের উত্থান Nitish Kumar Bihar Election 2025

১৯৫১ সালে বখতিয়ারপুরে জন্ম, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা তরুণ নীতীশ রাজনীতিতে আসেন সমাজবাদী আন্দোলনের হাত ধরে। ২০০৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, “জঙ্গল রাজ”-এর বিহারকে তিনি পরিণত করেন “সুশাসনের বিহার”-এ। তাঁর উন্নয়নমুখী রাজনীতি ছিল সংখ্যার মাপকাঠিতে প্রমাণযোগ্য—রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, নারী সুরক্ষা—সবই এক নতুন প্রশাসনিক মডেল তৈরি করে।

Advertisements

তাঁর “বিহার মডেল” ছিল বাস্তববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উজ্জ্বল ভাবমূর্তিতে এখন ক্লান্তির ছায়া পড়েছে।

প্রবীণ নেতার ক্লান্তি নাকি নতুন উদ্যমের সূচনা?

আজকের বিহারে নীতীশের অবস্থান খানিক জটিল—জনপ্রিয়তা আছে, কিন্তু আগের মতো উত্তেজনা নেই। তরুণ ভোটাররা চাইছে নতুন মুখ, নতুন ভাবনা। দীর্ঘ শাসনের ভারে প্রশাসনের ধারও কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবু নীতীশ এখনও রাজনীতির মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট। এনডিএ-তে ফিরে এসে তিনি আবারও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। জাতপাতের সমীকরণে দক্ষ চাল, সংখ্যালঘু ও নারী ভোটারদের প্রতি নিরন্তর আর্জি—সব মিলিয়ে তিনি এখনও সেই ‘মধ্যপন্থী’ নেতা, যিনি ভাঙেন না, শুধু বাঁক নেন।

উপসংহার: শেষ অধ্যায় নাকি নতুন সূচনা?

নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক যাত্রা শুধুই এক ব্যক্তির নয়, বরং এক রাজ্যের পরিবর্তনের কাহিনি। ২০২৫-এর ভোট সেই কাহিনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিহার কি বিদায় জানাবে তার ‘সুশাসন বাবু’-কে, না কি আরেকবার সুযোগ দেবে অভিজ্ঞতাকে—সেই উত্তরই দেবে ১৪ নভেম্বরের ভোটবাক্স।

ফলাফল যা-ই হোক, একথা নিশ্চিত—নীতীশ কুমার বিহারের রাজনীতিকে চিরতরে বদলে দিয়েছেন, এবং তাঁর উত্তরাধিকার এখন বিহারের ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।