নয়াদিল্লি: স্বাধীনতার পর প্রথমবার, পরিবর্তিত হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী দফতরের ঠিকানা। দক্ষিণ ব্লকের ঐতিহাসিক ভবন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবার পা রাখবেন নতুন দফতরে, দিল্লির এক্সিকিউটিভ এনক্লেভ-এর অন্তর্গত ‘সেবা তীর্থ–১’ ভবনে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপাবলির পর বা উৎসবের অব্যবহিত পরেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর নতুন অফিসে কাজ শুরু করবেন।
সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট
নতুন প্রধানমন্ত্রীর দফতর গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রশাসনিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা, সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-এর অংশ হিসেবে। পুরনো রাজপথ, এখনকার কর্তব্য পথ বরাবর বিস্তৃত এই প্রকল্পে আধুনিক, সংযুক্ত ও পরিবেশবান্ধব প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে তোলাই লক্ষ্য।
‘সেবা তীর্থ-১’ ছাড়াও তৈরি হয়েছে ‘সেবা তীর্থ-২’ ও ‘সেবা তীর্থ-৩’। জানা গিয়েছে, এই দুই ভবনে স্থানান্তরিত হবে ক্যাবিনেট সচিবালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দফতর (NSA Office)। গত ১৪ অক্টোবর ক্যাবিনেট সচিব টি. ভি. সোমনাথন সেখানে সেনাপ্রধান, নৌসেনাপ্রধান, বায়ুসেনাপ্রধান ও চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন— যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, নতুন কমপ্লেক্স ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রাণ সঞ্চার করছে।
‘যুগ–যুগিন ভারত সংগ্রহালয়’ PMO New Address Central Vista
দীর্ঘ দশক ধরে দক্ষিণ ব্লক ও নর্থ ব্লকই ছিল ভারতের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতীক। স্বাধীনতার পর থেকে এখানেই বসে নির্ধারিত হয়েছে দেশের নীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এবার সেই দুই ঐতিহ্যবাহী ভবনকে রূপ দেওয়া হবে এক নতুন রূপকল্পে— ‘যুগ–যুগিন ভারত সংগ্রহালয়’, যেখানে ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস তুলে ধরা হবে আধুনিক মিউজিয়ামের কাঠামোয়। ফরাসি মিউজিয়াম ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ইতিমধ্যেই এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার অংশীদার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যে বহুবার উঠে এসেছে, ঔপনিবেশিক আমলের পুরনো ভবনগুলিতে বহু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক আজও সীমাবদ্ধ পরিকাঠামোয় কাজ করছে। সংকীর্ণ জায়গা, আলো-বাতাসের ঘাটতি, এবং প্রযুক্তিগত অসুবিধা, এই সীমাবদ্ধতাই দূর করবে নতুন সেন্ট্রাল ভিস্তা কমপ্লেক্স।
কমন সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট
প্রকল্পের অন্তর্গত নতুন কমন সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট (CCS) ভবনগুলিতে ধাপে ধাপে স্থানান্তরিত হবে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মন্ত্রক ও বিভাগগুলি। সম্প্রতি উদ্বোধিত কর্তব্য ভবন-এ ইতিমধ্যেই একাধিক মন্ত্রক কাজ শুরু করেছে। আরও তিনটি CCS ভবন প্রস্তুত, সেগুলিও শিগগিরই চালু হবে।
সরকারের লক্ষ্য, ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণ সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প শেষ করা যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবনও। আধুনিক ‘অটোমেটেড পিপল মুভার’ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে সব প্রশাসনিক ভবন, যাতে যানজট ও যাতায়াতের সময় অনেকাংশে কমে আসে।
৭৮ বছরের পুরনো দক্ষিণ ব্লককে পেছনে ফেলে এই স্থানান্তর এক গভীর প্রতীকবাহী পদক্ষেপ— ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামো পা রাখছে নতুন যুগে। ইতিহাসের গাঢ় শিকড়ের পাশেই গড়ে উঠছে এক আধুনিক রাষ্ট্রচেতনার প্রতীক— ‘সেবা তীর্থ’, যেখানে দায়িত্ব ও কর্তব্যের সংজ্ঞা মিশে যাবে নতুন ভারতের স্থাপত্যে।