নয়দিল্লি: ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর একদিনের মধ্যেই কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানালেন, দেশের কৃষক, গবাদি পশু পালনকারী ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থে কোনও আপস হবে না। আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও, তাঁদের স্বার্থ রক্ষায় যে তিনি ‘মূল্য চোকাতে প্রস্তুত’ (PM Modi Vows To Safeguard Farmers)।
উত্তরপ্রদেশের সভামঞ্চ মোদী বলেন, “আমি জানি, এর জন্য আমাকে বড় মূল্য দিতে হতে পারে। কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষকদের স্বার্থে কোনও আপস করা হবে না৷”
ওয়াশিংটনের উদ্দেশে একটি ‘ডাইরেক্ট বার্তা’
মোদীর এই মন্তব্যকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে একটি ‘ডাইরেক্ট বার্তা’ হিসেবেই দেখছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। ভারত এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও একতরফা’ বলে ইতিমধ্যেই কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, “রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ভারতের শক্তি নিরাপত্তার প্রশ্নে বাজার নির্ভর সিদ্ধান্ত। ১৪০ কোটির দেশের জন্য জ্বালানির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।” মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, একতরফাভাবে ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা বৈষম্যমূলক, এবং সরকার সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিই প্রধান অক্ষ, কিন্তু কৃষিই বড় প্রতিবন্ধক
যদিও রাশিয়া থেকে তেল আমদানির প্রশ্নে দ্বিপাক্ষিক চাপের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে, মার্কিন-ভারত বাণিজ্য আলোচনার সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্র বরাবরই কৃষি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৃষিজ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকারের দাবি করে আসছে। অথচ ভারত তার বৃহৎ কৃষক-সমর্থিত গ্রামীণ অর্থনীতির স্বার্থে এই খাতে কঠোর সুরক্ষা দিয়ে আসছে-বিশেষত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP), ভর্তুকি ও খাদ্য নিরাপত্তা কাঠামোর কারণে।
জিএম ফসল, স্বাস্থ্যবিধি ও স্থানীয় জীবিকা রক্ষার মতো ইস্যুতেও দুই দেশের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। ফলে কৃষি বরাবরই দুই দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বিতর্কিত’ বাণিজ্যিক অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
‘চাপের কাছে মাথানত নয়’, সরকারি সূত্রের বার্তা
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট,”চাপ নয়, প্রথমে কৃষক স্বার্থই শেষ কথা।” মার্কিন চাপ যতই থাকুক, তাতে যে ভারত তার কৃষিনীতিতে বদল আনবে না, তা একপ্রকার পরিষ্কার করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
মোদীর এই বার্তা শুধু বাণিজ্য আলোচনার জন্য নয়, ২০২৯ সালের নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকারও বটে। একদিকে কৃষক-বান্ধব ভাবমূর্তি জোরদার, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শক্তির চাপ মোকাবিলা-এই দ্বৈত সুরেই তৈরি হচ্ছে ভারতের পরবর্তী বাণিজ্য কূটনীতি।