বারেলির এক সরকারি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করছেন শুমায়লা খান নামে এক পাকিস্তানি মহিলা, এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তিনি এই পদে কর্মরত রয়েছেন। তদন্তে জানা গেছে, ২০১৫ সালে তিনি রামপুর থেকে জাল ডমিসাইল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে এই চাকরি পেয়েছিলেন।
এই ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অখিলেশ যাদব এবং রামপুরের সাংসদ ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান। শুমায়লা খানের জাল ডমিসাইল সার্টিফিকেটের ঘটনাটি এই দুই নেতার প্রশাসনিক দায়িত্বের সময়কালেই ঘটেছে। এতে শাসক দলের উপর রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে এবং বিরোধীরা তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে।
জাল ডমিসাইলের মাধ্যমে সরকারি চাকরি
তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তানের নাগরিক শুমায়লা খান উত্তরপ্রদেশের রামপুর থেকে জাল ডমিসাইল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষিকার পদে নিয়োগ পান। তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং তার সমস্ত নথিপত্র নকল ছিল। বারেলির ওই স্কুলে তিনি ৯ বছর ধরে কাজ করেছেন এবং তার এই প্রতারণার বিষয়টি এতদিন কারও নজরে পড়েনি।
তৎকালীন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনাটি সামনে আসার পর অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সমাজবাদী পার্টি সরকারের প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৫ সালে যখন শুমায়লা খান এই চাকরি পান, তখন রামপুরের সাংসদ ছিলেন আজম খান, যিনি সেই সময়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজবাদী পার্টির শাসনামলকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে অখিলেশ যাদবের শাসনামলে কীভাবে দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক অবহেলা চরমে উঠেছিল। পাকিস্তানি নাগরিক কীভাবে সরকারি চাকরি পেতে পারে? এর জন্য দায়ী তৎকালীন সরকার এবং তাদের মদত দেওয়া নেতারা।”
বিরোধীদের তোপ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি সমাজবাদী পার্টির উপর আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে ধরেছে। পাকিস্তানি নাগরিক কীভাবে ভারতীয় নথি তৈরি করে সরকারি চাকরি করতে পারে? তৎকালীন সরকারের এই অবহেলার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
অখিলেশ যাদবের প্রতিক্রিয়া
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, “এটি একটি প্রশাসনিক বিষয় এবং এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। যে সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে, তখন অনেক প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা চাই, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীরা শাস্তি পাক।”
তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন
উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বারেলির পুলিশ ইতিমধ্যেই শুমায়লা খানের সমস্ত নথিপত্র জব্দ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, যারা তাকে এই চাকরি পেতে সাহায্য করেছে, তাদের চিহ্নিত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করা হয়েছে।
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, “এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি প্রতারণা নয়, এটি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন। আমরা শুমায়লা খান এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
দেশের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব
এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাকিস্তানি নাগরিক কীভাবে জাল নথি তৈরি করে বছরের পর বছর সরকারি চাকরি করতে পারে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি এবং এর প্রভাব ভবিষ্যতে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফাঁকফোকর এবং দুর্নীতির সুযোগকে কীভাবে কিছু মানুষ ব্যবহার করতে পারে।