নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত “দ্য কনস্টিটিউশন (ওয়ান হানড্রেড অ্যান্ড থার্টিয়েথ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৫” ( Prime Minister Bill)। এই বিল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ গুরুতর অপরাধে গ্রেফতার বা আটক অবস্থায় টানা ৩০ দিন জেলে থাকলে, তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদচ্যুত করা হবে।
এই বিলটি লোকসভায় উপস্থাপন করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি, তিনি আরও দুটি বিল পেশ করেন জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। কেন্দ্রের দাবি, “জেল থেকে সরকার চালানো গণতন্ত্রের নীতির পরিপন্থী”, তাই এই সংশোধন প্রয়োজন।
তবে বিরোধী দলগুলি শুরু থেকেই এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এবং দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজগম (DMK) সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই সংসদীয় কমিটির অংশ হবে না।
সরকার পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও, এই তিনটি দল কমিটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। অবশেষে, তাদের বাদ দিয়েই সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ আইন পর্যালোচনাকারী প্যানেলে বিরোধীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।
কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ভুবনেশ্বরের বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ ও অনুরাগ ঠাকুর। সহযোগী দলগুলির প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তেলুগু দেশম পার্টি (TDP)-এর সাংসদ লাভু শ্রী কৃষ্ণ দেবরায়লু, এবং শিন্ডে শিবসেনা-র ধৈর্যশীল মানে এই কমিটিতে রয়েছেন।
বিরোধীদের মধ্যে কেবলমাত্র কয়েকজন অংশ নিয়েছেন এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, এবং আকালী দল-এর হরসিমরত কৌর বাদল।
বর্তমানে ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ অনুসারে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি শুধুমাত্র দোষী সাব্যস্ত হলে পদ হারান। কিন্তু বিচারাধীন বা গ্রেফতার অবস্থায় তাঁকে পদত্যাগ করতে হয় না। এই ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল, ২০২৫ এই শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে—যাতে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন ধরে জেলে থাকেন, তাহলে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলে মন্ত্রীরা সাধারণত পদত্যাগ করেন। যদিও এটি আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, রাজনৈতিক ও জনমতের চাপে তা কার্যকর হয়। আমেরিকায়, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত পদে থাকা যায়, তবে অভিযোগ ওঠার পর প্রায়ই দলীয় চাপেই পদত্যাগ করতে হয়।
পাকিস্তানে, সংবিধান অনুযায়ী “নৈতিক স্খলন”-এর অভিযোগে অভিযুক্তদের আদালত নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে বা পদচ্যুত করে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস, তৃণমূল ও ডিএমকের অনুপস্থিতিতে এই কমিটি কার্যত একপাক্ষিক হয়ে পড়বে।
বিরোধীদের অভিযোগ, “এই বিলকে হাতিয়ার করে কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করতে পারে।” অন্যদিকে বিজেপির বক্তব্য, “দেশে শাসক পদে থাকা কেউ যদি জেলে থাকেন, তা সাংবিধানিক নৈতিকতার পরিপন্থী।”


