পহেলগাঁও কাণ্ডে সরাসরি কাশ্মীর যোগের প্রমান NIA এর হাতে

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-এর তহবিল (Pahalgam Attack) সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে শ্রীনগরের বাসিন্দা ইয়াসির হায়াতের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। এই TRF…

Pahalgam Attack

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-এর তহবিল (Pahalgam Attack) সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে শ্রীনগরের বাসিন্দা ইয়াসির হায়াতের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। এই TRF পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া নৃশংস জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত ছিল।

এই মোবাইলে ফোনে ৪৬৩টি যোগাযোগের সূত্র পাওয়া গিয়েছে। এই যোগাযোগগুলি ২০১১ সাল থেকে এনআইএ-র তদন্তাধীন ৮৭টি মামলার সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে জঙ্গি তহবিল সরবরাহের ঘটনা। তাহলে কি পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত কাশ্মীরের বাসিন্দারাই ?

   

এই তদন্তে মালয়েশিয়ায় থাকা একজন সন্দেহভাজন হ্যান্ডলার সাজাদ আহমেদ মীরের সঙ্গে ইয়াসির হায়াতের যোগাযোগের তথ্যও উদঘাটিত হয়েছে। এই ঘটনা ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এনআইএ-র তদন্তে জানা গেছে যে, ইয়াসির হায়াত টিআরএফ-এর জন্য বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করছিলেন। তার ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, তিনি মালয়েশিয়ার সাজাদ আহমেদ মীরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে ছিলেন। মীরের নির্দেশে হায়াত প্রায় ২ লক্ষ টাকার জঙ্গি তহবিল শফাত ওয়ানির হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

এছাড়াও, হায়াত মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের সময় দুটি পাকিস্তানি নম্বরের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। তদন্তে আরও জানা গেছে যে, শফাত ওয়ানি টিআরএফ-এর একজন মূল কার্যকর্তা এবং তিনি মোট ৯ লক্ষ টাকার তহবিল পেয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যান্য চ্যানেল থেকেও অর্থ এসেছিল।

টিআরএফ, যিনি লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)-এর একটি প্রক্সি সংগঠন হিসেবে পরিচিত, ২০১৯ সালে গঠিত হয়েছিল। এটি হিজবুল মুজাহিদিনের কমতে থাকা প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জঙ্গি কার্যকলাপকে নতুন পরিচয় দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

এই সংগঠনটি পাকিস্তান-স্পন্সর্ড সন্ত্রাসবাদকে স্থানীয় প্রতিরোধ হিসেবে চিহ্নিত করে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। এনআইএ-র তদন্তে এই সংগঠনের তহবিল নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা হচ্ছে, যা ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এফএটিএফ-এর সামনে একটি শক্তিশালী মামলা তৈরি করতে সাহায্য করবে।

Advertisements

ইয়াসির হায়াতের ফোনে পাওয়া ৪৬৩টি যোগাযোগের মধ্যে কয়েকটি পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়ার নম্বরে বারবার কল করা হয়েছে। এই যোগাযোগগুলি এনআইএ ২০১১ সাল থেকে তদন্ত করা ৮৭টি মামলার সঙ্গে সংযুক্ত, যার মধ্যে হাওয়ালা লেনদেন এবং এলইটি-র পূর্ববর্তী বিরোধী-জাতীয় কার্যকলাপ জড়িত।

এই তথ্যগুলি টিআরএফ-এর তহবিল নেটওয়ার্ক উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এনআইএ-র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই ৪৬৩টি যোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির বিশদ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এটি আমাদের টিআরএফ-এর তহবিলের উৎস এবং নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করবে।”

তদন্তে আরও জানা গেছে যে, শফাত ওয়ানি মালয়েশিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অজুহাতে সেখানে ভ্রমণ করেছিলেন, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি তার এই সফরের স্পনসর করেনি। এই ঘটনা সন্দেহ আরও গাঢ় করেছে যে, মালয়েশিয়া টিআরএফ-এর তহবিল সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়াও, এনআইএ শ্রীনগর এবং হান্দওয়ারায় অভিযান চালিয়ে টিআরএফ-এর বিদেশী তহবিল নেটওয়ার্কের নথি এবং আর্থিক বিবরণ উদ্ধার করেছে।

এই তদন্তের ফলাফল ভারতের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের জঙ্গি তহবিলের ভূমিকা উন্মোচন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। টিআরএফ-কে সম্প্রতি আমেরিকা বিদেশী জঙ্গি সংগঠন এবং বিশেষভাবে মনোনীত গ্লোবাল সন্ত্রাসবাদী সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এই ঘটনা পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপের পুনঃব্র্যান্ডিং কৌশলকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

এনআইএ-র এই তদন্ত শুধুমাত্র টিআরএফ-এর তহবিল নেটওয়ার্ক উন্মোচন করছে না, বরং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই তথ্যগুলি এফএটিএফ-এর সামনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে, যা তাদের গ্রে লিস্টে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।