মোদীর জন্য নৈশভোজ পুতিনের, ‘অতিথি’কে খুশি করতে কোন ‘গেরস্থ’র পাল্লা ভারী?

নয়াদিল্লিঃ তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশ সফরে রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ৮ জুলাই মস্কোর উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির…

মোদী পুতিন

নয়াদিল্লিঃ তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশ সফরে রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ৮ জুলাই মস্কোর উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একাধিক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমী বিশ্ব কোনঠাসা করে রাশিয়াকে। যারফলে স্বাভাবিকভাবেই চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রাশিয়ার। যারা ২০২২ সালে বুক বাজিয়ে ঘোষণা করেছিল, তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার ‘কোনও সীমাপরিসীমা থাকবে না’। পরবর্তীতে রুশ-চিনের এই পশ্চিম বিরোধী অক্ষে যোগদান করে ইরানও।

   

১০ জুলাই উপনির্বাচন, কোথায় এগিয়ে কে? দেখুন লোকসভা ভোটের নিরিখে ৪ বিধানসভার ফল

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। রাশিয়াকে কোনঠাসা করে উঠেপড়ে লাগে আমেরিকা। তার সামরিক জোট ন্যাটোকেও সক্রিয় করে তোলে জো বাইডেন প্রশাসন। রাশিয়া বিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্য একাধিক দেশের ওপর চাপ বাড়াতে হোয়াইট হাউস।

এমনকি নয়াদিল্লিক ওপরও রুশ বিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ বাড়িয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু মার্কিনি চাপের মুখে মাথা নিচু করেনি ভারত। রাশিয়ার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও মস্কোর থেকে সস্তায় তেল আমদানি করে ভারত। এরফলে পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা জটিল হয়, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বলে দাবি কূটনৈতিক মহলের। ভারতে লোকসভা ভোটের আগে আমেরিকা ‘অঘোষিত’ ভাবে মোদী বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল বলেও কূটনীতিকদের অনেকেই দাবি করেছিলেন। ভারতে সংখ্যলঘু নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক কেন্দ্র বিরোধী রিপোর্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল মোদী সরকারকে।

বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রথের রশিতে টান মমতার, ইসকনের রথযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী

আর এবার তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদীর রুশ সফর কতটা ‘খোলা মনে’ নেবে আমেরিকা, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তির কথায়, “এই দুই পক্ষই পরস্পরকে বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে গণ্য করে। পরস্পরের প্রভাব দুর্বল করার চেষ্টায় ব্যস্ত। তাতে আন্তর্জাতিক শান্তি অথবা আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এই দৃশ্য ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনছে।”

বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, মোদী-পুতিন বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার পেতে চলেছে। এক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকা নয়াদিল্লির রফতানি বাড়ানো। দুই, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়ে আটকে পড়া ভারতীয়দের দ্রুত ফেরত পাঠানো। তিন, প্রতিরক্ষা সমঝোতাকে আরও শক্তিশালী করা। চিনকে প্রতিহত করতে নয়াদিল্লিকেই প্রথম থেকে এই গোষ্ঠীর অন্যতম ‘ঘোড়া’ ভাবত আমেরিকা।

খেলতে খেলতে পুকুরে ঝাঁপ! আগ্রায় একে একে তলিয়ে গেল ৪ শিশু

কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নয়াদিল্লির ইউক্রেন নিয়ে ‘অনড়’ মনোভাবের কারণে মোদী সরকারকে ‘পছন্দে’র তালিকায় রাখতে চাইছে না হোয়াইট হাউস। বরং তার পরিবর্তে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের ‘আউকাস’ গোষ্ঠীর গুরুত্ব বাড়াতে বেশি আগ্রহী জো বাইডেন প্রশাসন। এদিকে ভারত সীমান্তে চিনের অনুপ্রবেশ ও দাদাগিরি নিয়েও ভারতের পাশে দাঁড়াতে খুব একটা উত্সাহী দেখাচ্ছে না আমেরিকাকে। তাঁদের এই ‘ঔদাসীন্যতা’ নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় নয়াদিল্লি।

প্রধানমন্ত্রীর সন্মানে নৈশভোজ দেবেন ভ্লাদিমির পুতিন। গতবছর নরেন্দ্র মোদীর সন্মানে একইরকম নৈশভোজের আয়োজন করেছিল হোয়াইট হাউস। কিন্তু অতিথিকে ‘খুশি’ করার এই প্রীতিভোজে কোন ‘গেরস্থ’ আখেরে খুশি হন সেটাই দেখার।