বাম জমানায় জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে KLO জঙ্গি হামলায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। জীবন সিংহের (Jibon Singh) নির্দেশে পাঁচ সিপিআইএম নেতা-কর্মীকে খুন করা হয়।
পৃথক কামতাপুর চাই। তা না হলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। এমনই হুমকি দেওয়া কেএলও জঙ্গি প্রধান জীবন সিংহের আত্মসমর্পণ নিয়ে টানা বিতর্ক চলছে। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি আত্নগোপনকারী জঙ্গি নেতা জীবন সিংহের অতি সাম্প্রতিকতম ভিডিও প্রকাশ করেছে তারই অন্যতম ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিত রায়। এই ভিডিওতে কেএলও প্রধান ভিকট্রি চিহ্ন দেখাচ্ছে। (এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি kolkata 24×7)
এবার একটি ভিডিও দিয়েছে জীবন সিংহের ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিৎ রায়। তাতে জীবন সিংহকে পাহাড়ি পথে হেঁটে আসতে দেখা যাচ্ছে। কেএলও প্রধানের ঘনিষ্ট দাবি করে, অসম রাইফেলসের জিম্মায় আছে জীবন সিংহ। শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকা জীবন সিংহকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল উত্তরবঙ্গের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হবে এমন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে দাবি করে একাধিক সংবাদপত্র। এর পরেই জীবন সিংহ আত্মসমর্পণ করার খবর এসছে। এবার প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি বঙ্গ ভঙ্গ করে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হবে?
ভারত, মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, চিন, ভুটান কোন দেশে আত্মগোপন করে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন চালাচ্ছে জীবন সিংহ ওরফে তামির দাস, এই প্রশ্ন বারবার গোয়েন্দাদের তাড়া করেছে। দুদিন আগে অসম রাইফেলস দাবি করে মায়ানমার থেকে নাগাল্যান্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করে এক শীর্ষ কেএলও নেতা। অসম রাইফেলস আত্মসমর্পণরারীর নাম প্রকাশ না করলেও এটা জানায় শীর্ষ কেএলও নেতাকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে শান্তি বৈঠকে বসানো হবে। এর পর সর্বভারতীয় সংবাদপত্র The Hindu জানায় শান্তি বৈঠকে অংশ নিতে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন প্রধান জীবন সিংহ আত্মসমর্পণ করেছে।
উত্তরবঙ্গ জুড়ে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে তার প্রধান হিসেবে কেএলও জঙ্গি সংগঠনের প্রধান জীবন সিংহকে নতুন অঞ্চলের প্রশাসক পদে বসানো হবে। এমন সংবাগ ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ আগেই প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছিল অসমের একটি কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতিয়ে এনে নতুন গঠিত হতে চলা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ‘মুখিয়া’ বানানো হবে। এই সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে আছে বিরোধী দল বিজেপি। এবার ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কেএলও প্রধানের আত্মসমর্পণ ও তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতে বিতর্ক আরও বাড়ল। সত্যিই কি পৃথক উত্তরবঙ্গ হচ্ছে? আর তার প্রধান হতে চলেছে জীবন সিংহ? এই দুই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল।
আলাদা কামতাপুর গঠন না হলে ‘রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব’ এমন হুমকি দেওয়া কেএলও (KLO) জঙ্গি নেতা জীবন সিংহ (Jibon Singh) ভারত সহ আরও তিনটি দেশের সরকারের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। এমন বিচ্ছিন্নতাবাদী জীবন সিংহকে বিশেষ পদ দিয়ে কেন্দ্র সরকার একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Teritory) গঠনের প্রক্রিয়া করেছে। পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার (partition of bengal) এমনই খবর গত বছর ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ করার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে তীব্র শোরগোল পড়ে যায়
এ রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি কেন এক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতাকে এমন পদমর্যাদা দিতে চলেছে তা নিয়েই বিতর্ক। এ বিষয়ে কোনও বিজেপি নেতা মুখ না খুললেও বারবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পৃথক উত্তরবঙ্গের কথা বলেছেন। একইভাবে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ সহ উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদ, বিধায়করা বারবার আলাদা উত্তরবঙ্গের জন্য সরব হয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য ভাগ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছে। তৃ়ণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জীবন সিংহ। আর পৃথক রাজ্য হবে না বলে বার্তা দিয়েছে সিপিআইএম।
ভুটানের মাটিতে অপারেশন অল ক্লিয়ার অভিযান চালিয়েছিল প্রতিবেশি দেশটির সেনা। বন্ধু ভারতের জন্য সেদিন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল ছোট্ট দেশটির সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে গুঁড়িয়ে গেছিল অন্তত ছটি ভারত বিরোধী সশস্ত্র সংগঠনের ঘাঁটি। ২০০৩-২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকে জানিয়ারির মধ্যে চলা সেই অভিযানের পর থেকে নিখোঁজ ছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিংহ ওরফে তামির দাস। জানা যাচ্ছে এবার সে আত্মসমর্পণ করেছে
আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের বাসিন্দা তামির দাস ওরফে জীবন সিংহর নির্দেশে ২০০২ সালে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে হামলা চালিয়েছিল কেএলও। পাঁচ সিপিআইএম কর্মীকে খুন করে তারা। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার বাম আমলে ধৃত ধূপগুড়ি হামলার জঙ্গিরা জামিন পায়। এরপর দীর্ঘ সময় কেএলও নেতা নীরব ছিল। ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ জানাচ্ছে উত্তরবঙ্গ কেটে যে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব আছে তাতে প্রধান পদ পাবে জীবন সিংহ। এই জঙ্গি নেতাকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে শিলিগুড়িতে আনা হবে।
২০০৩-২০০৪ সালে ভুটান সরকারের সেনাবাহিনী (Royal Bhutan Army) ‘অপারেশন অলক্লিয়ার’ চালিয়ে একযোগে সাতটি ভারত বিরোধী জঙ্গির ঘাঁটি উচ্ছেদ করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই জঙ্গি দমন অভিযানের পর থেকে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন অর্থাৎ KLO সংগঠনের প্রধান জীবন সিংহ আত্মোগোপনে। এবার তার আত্মসমর্পণের বিষয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।