নিউজ ডেস্ক, নয়াদিল্লি: গত এক বছর ধরে সংযুক্ত কিষান মোর্চার (Kishan Morcha) নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে ছোট-বড় একাধিক কৃষক সংগঠন। গত সপ্তাহে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
এরই মধ্যে পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকজন কৃষক নেতা এবার বিধানসভা নির্বাচনকে দিকে তাকিয়ে রাজনীতিতে পা বাড়াচ্ছেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চার শীর্ষ নেতারা আদৌ বিষয়টিকে ভালভাবে দেখছেন না। বরং তাঁরা কৃষক নেতাদের এ ধরনের সীদ্ধান্তে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি এটাও শোনা যাচ্ছে যে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যেও একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
২৬ নভেম্বর কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি। এদিন বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কৃষক সংগঠনগুলি গোটা দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০২০ সালে চল্লিশটি কৃষক সংগঠনকে একজোট করে তৈরি হয়েছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। কৃষি আইন বাতিলের কথা ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই কৃষক সংগঠনগুলির ঐক্যে ফাটল ধরেছে।
একাধিক কৃষক সংগঠন ও সেই সংগঠনের নেতারা পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। যে বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছে না সংযুক্ত কিষান মোর্চা। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, আন্দোলন পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কৃষক সংগঠনগুলির উচিত একসঙ্গে থাকা। যে কারণে সংযুক্ত কিষান মোর্চা তাদের আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক দলকে প্রচারে আসতে দিতে নারাজ।
তবে সংযুক্ত কিষান মোর্চার এই সমস্ত বক্তব্যকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কৃষক সংগঠন একাধিক দলের নির্বাচনী প্রচারে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কয়েকটি সংগঠন আবার রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকার কথাও জানিয়েছে। কিছুদিন আগেই সংযুক্ত কিষান মোর্চার অন্যতম নেতা গুরনাম সিং চাদুনি বলেছিলেন, সংযুক্ত কিষান মোর্চার উচিত ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া। যদিও ওই বক্তব্যের পরই চাঁদুনিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের হরিয়ানা শাখার সভাপতি ‘পাঞ্জাব মিশন ২০২২’ নামে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলের প্রচারেও তাঁকে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। ঘটনার জেরে সংযুক্ত কিষান মোর্চা চাঁদুনির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছে।
তবে শুধু চাঁদুনি একা নন, একাধিক কৃষক নেতা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছেন বলে খবর। কৃষক নেতাদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও তাঁদের নিজেদের অনুকূলে টানতে উঠে পড়ে লেগেছে। তবে কৃষক আন্দোলন সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই সরাসরি এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না।
অন্যদিকে ক্রান্তিকারী কৃষক ইউনিয়নের সভাপতি দর্শন পাল বলেছেন, যদি কৃষক নেতারা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেন তবে তাঁদের উচিত আর কিছুদিন অপেক্ষা করা। তবে তাঁরা যদি আমাদের না জানিয়ে কিছু করেন সেক্ষেত্রে সংগঠনের অবশ্য কিছু করার নেই। আমরা মনে করি কৃষক আন্দোলন সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।