লন্ডন: বিদেশ সফরে গিয়ে হামলার মুখে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর৷ চ্যাথাম হাউসে আলোচনা শেষে গাড়িতে ওঠার সময় আচমকাই তাঁর গাড়ির সামনে চলে আসেন এক ব্যক্তি৷ পুলিশের উপস্থিতিতেই ভারতের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন তিনি৷ এই ঘটনার ভিডিয়ো দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে৷ আন্তর্জাতিক পরিসরে শুরু হয় আলোচনা৷
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হামলার পেছনে খলিস্তানপন্থীদের হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বুধবার রাতে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চ্যাথাম হাউসে একটি আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আলোচনার শেষে তিনি যখন চ্যামাথ হাউজ থেকে বেরিয়ে আসছেন তখন খলিস্তানপন্থী সমর্থকরা ভারত বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে রাস্তার পাশে জড়ো হন। পুলিশের সামনেই তারা বিভিন্ন ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে, এক হামলাকারী হঠাৎ করেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্করের কনভয়ের সামনে চলে আসেন এবং ভারতের ত্রিরঙ্গা পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন। সেই সময় আরও কয়েকজন খলিস্তানপন্থী স্লোগান দিতে শুরু করেন। প্রথমে পুলিশ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তারা হামলাকারীকে আটক করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চ্যাথাম হাউসের বাইরে খলিস্তানপন্থী সমর্থকরা খলিস্তানি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে৷
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ভিভিআইপি (VVIP) নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি গুরুতর গাফিলতি৷ প্রাথমিক তদন্তে, হামলার পেছনে খলিস্তানপন্থী নেতা গুরপতবন্ত সিং পন্নুনের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (SFJ)-এর হাত রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, SFJ সদস্যরাই ব্রিটেনে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দুরাইস্বামীর উপর হামলা চালিয়েছিল। তাছাড়া, লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ এবং হামলার চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারতের ব্রিটেনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান এবং ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিদেশমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সম্পর্কে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। বৈঠকে ব্রিটেনের বিদেশ সচিব ডেভিড ল্যামি এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, চ্যাথাম হাউসে অনুষ্ঠিত আলোচনায়, মন্ত্রীকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, জয়শঙ্কর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ভারত ইতোমধ্যে কাশ্মীরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উচ্চমাত্রার নির্বাচন প্রক্রিয়া।
তিনি আরও বলেন, “কাশ্মীরের মূল সমস্যা ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। কেবল পাকিস্তানের অবৈধ দখলকৃত কাশ্মীরের অংশ ফিরিয়ে আনলেই এই সমস্যা সমাধান হবে,” মন্তব্য করেন তিনি।