কর্ণাটক: হাইকোর্ট (Karnataka High Court) রবিবার এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-কে আগামী ২ নভেম্বর চিত্তপুরে (Chittapur) রুটমার্চ বা শোভাযাত্রা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে। রাজ্য সরকারের আপত্তি ও প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে RSS-এর পক্ষে আদালতে আবেদন করেছিলেন সংগঠনের কালাবুরগি জেলার আহ্বায়ক অশোক পাটিল (Ashok Patil)।
বিচারপতি এম.জি.এস. কামাল (Justice M.G.S. Kamal) শুনানিতে রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করেন, কেন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং প্রশাসন কীভাবে সব পক্ষের মত ও অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আদালত বলেন, “সবার অনুভূতিকে সম্মান জানানো জরুরি, এবং প্রশাসনকে সংবিধানসিদ্ধ অধিকার রক্ষায় ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”
প্রাথমিকভাবে চিত্তপুর প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখিয়ে RSS-এর র্যালির অনুমতি দেয়নি। একই দিনে ভীম আর্মি (Bhim Army) ও ভারতীয় দলিত প্যান্থার (Bharatiya Dalit Panther)-ও একই জায়গায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল, ফলে সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে RSS-এর পক্ষে আবেদনকারী অশোক পাটিলকে নতুন করে বিস্তারিত তথ্যসহ আবেদন জমা দিতে হবে কালাবুরগির জেলা প্রশাসকের (Deputy Commissioner) কাছে। আদালত আরও বলেছে, প্রশাসনকে আগামী ২৪ অক্টোবর-এর মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এরপরই আদালত চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে।
চিত্তপুর এলাকায় সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছিল। এক RSS কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে (Priyank Kharge)-কে হুমকি দিয়েছেন। সেই ঘটনার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এছাড়া, শহরে গেরুয়া পতাকা ও ব্যানার লাগানো নিয়েও প্রশাসন আপত্তি তোলে এবং সেগুলি সরিয়ে দেয়।
এরই মধ্যে কর্ণাটক সরকার এক নতুন আদেশ জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে — সরকারি সম্পত্তি বা মাঠ ব্যবহার করে কোনো বেসরকারি সংগঠন অনুষ্ঠান করতে চাইলে আগে থেকেই অনুমতি নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (Siddaramaiah) জানিয়েছেন, এই নিয়ম বিজেপি সরকার (Jagadish Shettar সরকার)-এর আমলেই আনা হয়েছিল, তাই RSS-কে টার্গেট করার প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি বলেন, “আমরা কাউকে টার্গেট করছি না। নিয়মটি সব সংগঠনের জন্য প্রযোজ্য। বিজেপি সবসময় রাজনীতি করে, তারা গরিব মানুষের কাজের কথা ভাবে না।”
রাজ্য বিজেপি সভাপতি বিজয়েন্দ্র ইয়েদিউরাপ্পা আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আদালত সংবিধান রক্ষা করেছে। যারা RSS-এর মার্চ বন্ধ করতে চেয়েছিল, তারা অপমানিত হয়েছে। এই রায় প্রমাণ করে, গণতন্ত্রে একনায়কতন্ত্রের জায়গা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “চিত্তপুরে RSS-এর শোভাযাত্রা বন্ধের চেষ্টা আসলে সংবিধানের ভাবনার পরিপন্থী। যদি এই একই শর্ত সব অনুষ্ঠানে প্রযোজ্য হয়, তবে কর্ণাটকে কোনো দেশপ্রেমিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।”
চিত্তপুরের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্ণাটকের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আদালতের রায় একদিকে RSS-এর সাংগঠনিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্যদিকে সরকারের ওপর প্রশাসনিক ভারসাম্য রক্ষার দায়ও দিয়েছে।