লিপুলেখ, কালি নদী ও সীমান্ত বিতর্ক: ভারতের সঙ্গে কোন সম্পর্কের পথে হাঁটবেন সুশিলা কার্কি?

Karki reignites border row with India কাঠমাণ্ড: নেপালের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। জেন-জেড আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সুশিলা কার্কি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। নেপালের ইতিহাসে প্রথম…

Karki reignites border row with India

Karki reignites border row with India

কাঠমাণ্ড: নেপালের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। জেন-জেড আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সুশিলা কার্কি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্বগ্রহণ ঘিরে একদিকে যেমন আশার আলো জ্বলেছে, অন্যদিকে সীমান্ত-সংক্রান্ত পুরনো বিতর্ক আবারও নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। 

লিপুলেখ বিরোধের মূল কারণ

ভারত–নেপাল সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার। অধিকাংশ অংশ চিহ্নিত হলেও কালি নদীর উৎস নিয়ে দুই দেশের দাবি একেবারেই ভিন্ন। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তি অনুযায়ী নদীর পশ্চিম অংশ ভারতের, পূর্ব অংশ নেপালের। কিন্তু বিতর্ক কোথায়? ভারত মনে করে কালি নদীর উৎস একটি ছোট্ট স্রোতধারা, অন্যদিকে নেপালের দাবি, নদীর উৎস লিম্পিয়াধুরা, ফলে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা নেপালের ভেতরেই পড়ে।

   

লিপুলেখের কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এখান দিয়েই ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয় কৈলাস-মানস সরোবর এবং তিব্বতের। তাই এ পথ শুধু তীর্থযাত্রার জন্য নয়, ভারতের উত্তর সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

ওলির সময়কার উত্তেজনা Karki reignites border row with India

২০১৫ সালে ভারত-চীন চুক্তিতে লিপুলেখ দিয়ে মানস সরোবর যাত্রা শুরু হলে নেপাল আপত্তি তোলে। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে কালাপানি ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। পাল্টা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সংসদে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র পাশ করান, যেখানে বিতর্কিত এলাকা নেপালের বলে দাবি করা হয়। এটি দুই দেশের সম্পর্কে শীতলতা আনে।

ওলি এই ইস্যুকে নেপালের ‘জাতীয় পরিচয়’-এর সঙ্গে জুড়ে দেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে ‘অধিকারের জমি দখলের’ অভিযোগ করেন। দেশীয় রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই এই পদক্ষেপকে দেখেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

কার্কির সামনে চ্যালেঞ্জ

এখন প্রশ্ন, সুশিলা কার্কি কী পথে হাঁটবেন? আইনজীবী ও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত কার্কি বরাবরই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সরাসরি সংঘাত নয়, বরং কূটনীতি ও সংলাপকেই অগ্রাধিকার দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Advertisements

তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দ্বিমুখী-একদিকে নেপালের জনগণের ভূখণ্ড সংক্রান্ত আবেগকে মর্যাদা দেওয়া, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা। নেপালের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল। তাই আক্রমণাত্মক অবস্থান নিলে যেমন দুই দেশের সম্পর্কে আবারও টান পড়বে, তেমনি সংলাপের পথে হাঁটলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে।

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতের জন্য লিপুলেখ শুধুই সীমান্ত নয়, এটি সরাসরি চীনের সীমান্তসংলগ্ন এক কৌশলগত করিডর। এ অঞ্চলে ভারত ইতিমধ্যেই অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে এবং স্পষ্ট জানিয়েছে, সীমান্ত বিতর্ক কোনও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নয়, কেবল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই মেটানো হবে।

শেষকথা

লিপুলেখ ও কালি নদীর সীমান্ত বিতর্ক নেপালের রাজনীতিতে কেবল একটি মানচিত্রের রেখা নয়, বরং জাতীয় পরিচয় ও আবেগের প্রশ্ন। এখন নজর সুশিলা কার্কির দিকে, তিনি কি ওলির মতো আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটবেন, নাকি সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে ভারত-নেপাল সম্পর্ককে নতুন আস্থা উপহার দেবেন?

 Bharat: Sushila Karki, Nepal’s first female Prime Minister, takes office as the border dispute over Lipulekh, Kalapani, and Limpiyadhura with India resurfaces, bringing a long-standing conflict back into focus.