কাশ্মীরে ফের গুলির লড়াই, তিন জঙ্গি ঘিরে ফেলল সেনা

জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় সোমবার (৩১ মার্চ) নতুন করে একটি সংঘর্ষ (J&K Encounter) শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তিন জঙ্গি পঞ্জতীর্থী এলাকায় আটকা পড়েছে। এলাকাটি ঘিরে…

J&K Encounter night

জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় সোমবার (৩১ মার্চ) নতুন করে একটি সংঘর্ষ (J&K Encounter) শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তিন জঙ্গি পঞ্জতীর্থী এলাকায় আটকা পড়েছে। এলাকাটি ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং তল্লাশি অভিযান চলছে। গত তিন দিনে এটি নিরাপত্তা বাহিনী এবং জঙ্গিদের মধ্যে দ্বিতীয় গুলির লড়াই। এই ঘটনা কাঠুয়া জেলায় সাম্প্রতিক জঙ্গি কার্যকলাপের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

   

সংঘর্ষের শুরু

সোমবার সন্ধ্যার দিকে পঞ্জতীর্থী এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা যাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। স্থানীয় সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি), ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) যৌথভাবে অভিযান শুরু করে। অভিযানের শুরুতেই জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়, যার জবাবে প্রতিরক্ষামূলক গুলি চালানো হয়। বর্তমানে তিন জঙ্গি পঞ্জতীর্থী এলাকার একটি ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি অঞ্চলে আটকে রয়েছে বলে জানা গেছে। এলাকাটি পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং ড্রোন ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নজরদারি চলছে।

Advertisements

তিন দিনে দ্বিতীয় সংঘর্ষ

এই সংঘর্ষের ঠিক তিন দিন আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ), কাঠুয়ার সফিয়ান জঙ্গলে আরেকটি তীব্র গুলির লড়াই হয়েছিল। সেই সংঘর্ষে তিন জঙ্গি এবং তিন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এছাড়া একজন ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) সহ সাতজন আহত হন। ওই অভিযানে জঙ্গিরা এম৪ কার্বাইন এবং গ্রেনেডের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা তাদের প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার গভীরতা প্রকাশ করে। পুলিশের ধারণা, সেই গ্রুপটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল। সোমবারের এই নতুন সংঘর্ষে আটকা পড়া জঙ্গিরা সেই গ্রুপের অবশিষ্ট সদস্য হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর কৌশল

নিরাপত্তা বাহিনী এই অভিযানে কঠোর কৌশল অবলম্বন করেছে। পঞ্জতীর্থী এলাকার ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি ভূখণ্ড অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং করে তুললেও, সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী (প্যারা ফোর্সেস) এবং এসওজি-র সমন্বিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের পালানোর পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি নলিন প্রভাত এবং জম্মু জোনের আইজি ভীম সেন টুটি গত কয়েকদিন ধরে কাঠুয়ায় অবস্থান করে অভিযানের তদারকি করছেন। স্থানীয়দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এলাকার সড়ক ও জনবহুল স্থানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জম্মু-পাঠানকোট জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কাঠুয়ায় জঙ্গি কার্যকলাপের উত্থান

কাঠুয়া জেলা গত কয়েক বছরে জঙ্গি কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই জেলা দিয়ে জঙ্গিরা প্রায়ই ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের চাপ বাড়ার কারণে জঙ্গিরা পীর পঞ্জাল অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। এখান থেকে তারা কাঠুয়া, উধমপুর এবং ডোডার মতো জেলায় প্রবেশ করে হামলার পরিকল্পনা করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কাঠুয়ায় জঙ্গি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকার ও জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বীর জওয়ানদের বলিদান ভুলব না। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।” জম্মু অঞ্চলে বিজেপি, কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং পাহাড়ি এলাকায় বড় আকারের তল্লাশি অভিযানের দাবি তুলেছে। স্থানীয়রা নিরাপত্তা বাহিনীকে খাদ্য ও সহায়তা দিয়ে সাহায্য করছে, যা জনগণ ও বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের প্রতীক।

বর্তমানে পঞ্জতীর্থী এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করতে সমস্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশের ধারণা, এই জঙ্গিরা জৈশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বজায় থাকবে। এই ঘটনা কাঠুয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।